বিশ্বব্যাপী করোনার ছোবলের শিকার হচ্ছে সব বয়সী মানুষ। তবে, তুলনামূলকভাবে মৃত্যুঝুঁকি বয়স্কদের বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যা, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কারণেও পরিণত হয়েছে।
এছাড়া, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে দীর্ঘদিন বেতন পাচ্ছেন না। এসব বিষয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের অভিভাবকদের।
মনোবিদরা বলছেন, বেকারত্ব, চাকরি হারানো, অনিশ্চয়তা, ভবিষ্যতের ভীতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি করে। আর এতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি তুলনামূলক হারে বেশি লক্ষণীয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. গওছুল আযম বলেন, ‘এই করোনাকালীন বড় সমস্যা হলো উদ্বেগ। অবশ্যই বয়স্কদের জন্য এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যতটুকু সম্ভব প্রত্যেকের উচিত পরিবারের সঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটানো। মনকে চাঙা রাখে, এমন কিছু করা। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ব্যয়াম করতে হবে। রুটিনমাফিক চলতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বলেন, ‘বেকারত্ব অনেকের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে। বয়স্করাও এর বাইরে নয়। বিষয়গুলো একজন মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই নানারকম দুশ্চিন্তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক্ষেত্রে সবার মানবিক আচরণ করতে হবে। পরিবারকে বেশি সময় দিতে হবে।’
ঢাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘এখন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার যে ঝুঁকি, সেটি অনেকটা কেটে যাচ্ছে। এর বড় কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা। পেটে খাবার না থাকলে মানুষকে বের হতেই হবে। তবে একজন কর্ম শেষে যখন বাসায় ফিরে অবশ্যই সেটি পরিবারের অন্যদের জন্য ঝুঁকির। কিন্তু উপায় নেই। বাসার বয়স্কদের জন্য সেটি আরও বেশি আতঙ্কের।’
জানতে চাইলে মনোবিদ অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘মানুষের পেটে রয়েছে ক্ষুধা। মানুষ তো বের হবেই। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এর ওপরই সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে। তবে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মানুষকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নানা সংকটের মধ্যে সময় পার করছে। দিন যতই যাচ্ছে এই প্রবণতা বাড়ছে। অনেক কর্মজীবী তাদের কর্ম হারাচ্ছেন। এছাড়া, অনেকের কর্ম হারানোর ভীতি রয়েছে। ’
ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে মানুষের হতাশা ও মানসিক বিষণ্নতা বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক। সরকারের উচিত এমন পরিস্থিতিতে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে সুনির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী কাজ করা। যার মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর পাশাপাশি মানুষের কর্মের নিশ্চয়তা থাকবে।’ তবে, সুস্থ থাকতে নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার বিকল্প নেই বলেও তিনি মনে করেন।