দাম বাড়ায় দেশে জ্বালানি তেল বিক্রি কমে গেছে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তার ফলে বেশ কমেছে অকটেন ও পেট্রলের বিক্রি। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ভোক্তাদের কেউ কেউ সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বা অটোগ্যাসের ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে গত জুলাই মাসে গড়ে দৈনিক এক হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন অকটেন বিক্রি হতো। কিন্তু গত ৫ আগস্ট তেলের দাম বাড়ার পর থেকে এক হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া দাম বাড়ার আগে যেখানে গড়ে দৈনিক এক হাজার ৩০০ মেট্রিক টন পেট্রল বিক্রি হলেও দাম বাড়ার পর গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ মেট্রিক টন। একই সঙ্গে কমেছে ডিজেলের বিক্রিও। গত জুলাই মাসে গড়ে দৈনিক ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ১৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। দাম বাড়ার পর থেকে গড়ে দৈনিক ডিজেল বিক্রি হয় ১৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেল ছাড়া প্রায় ৯০ শতাংশ গাড়িতেই জ্বালানি তেলের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে সিএনজি ও এলপিজি কনভারসন (রূপান্তর) করা আছে। নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অনেকেই এখন সিএনজি ও এলপিজি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যে কারণে পেট্রল ও অকটেনের বিক্রি কমছে। মূলত অকটেনের তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে গাড়ির মালিকদের এখন সিএনজি ও এলপিজিতে ঝুঁকছে। যেখানে এখন এক লিটার অকটেনের দাম ১৩৫ টাকা, সেখানে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি ৪৩ টাকা এবং প্রতি ঘনমিটার এলপিজি ৫৬ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে এখন গাড়িতে সিএনজি ও এলপিজি সিলিন্ডার কনভারসনের প্রবণতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। সিএনজি ও এলপিজি ব্যবহার করা একটি গাড়ির সমান দূরত্ব অতিক্রম করতে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রলচালিত গাড়ির খরচ পড়ে প্রায় দ্বিগুণ। এমন অবস্থায় সিএনজি ও এলপিজির ব্যবহার আগামীতে আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে ডুয়াল-ফুয়েলের গাড়িগুলো জ্বালানি হিসেবে ৬০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন তারা গাড়িতে প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করছে। বাকি জ্বালানির জন্য তাদের জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দেশের সব জায়গায় গ্যাস সহজলভ্য না হওয়ায় এভাবেই চলতে হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দাম বাড়লে ব্যবহার কমবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। খরচ কমাতে জ্বালানি তেলের বিকল্প উৎস এলপিজি ও সিএনজির দিকে যাচ্ছে মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জ্বালানি তেলের বিকল্প হিসেবে এলপিজি বা অটোগ্যাস ব্যবহার করছে। এদেশে যদি এখন এলপিজির দিকে যেতে পারে তাহলে তা হবে খুবই ইতিবাচক। কারণ দেশীয় গ্যাসের সঙ্কটে এলএনজি আমদানি করে সিএনজিতে দেয়া হচ্ছে। এখন স্পট মার্কেটের (খোলাবাজার) এলএনজি অনেক ব্যয়বহুল হয়ে গেছে। তাই এই মুহূর্তে দেশে এলপিজির আরো প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া জানান, বিপিসির হিসাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগের তুলনায় দাম বাড়ার পর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দৈনিক বিক্রি কিছুটা কমেছে।