• নভেম্বর ২১, ২০২৪ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

জ্বালানি সঙ্কটে শিল্পোদ্যোক্তারা ঝুঁকছে এলপিজিতে

সেপ্টে ১৫, ২০২২

দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা এলপিজিতে ঝুঁকছে। মূলত তীব্র গ্যাস সঙ্কটেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। উৎপাদন চালু রাখতে এখন ছোট-বড় সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই গড়ে তোলা হচ্ছে এলপিজি সরবরাহের অবকাঠামো। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল পুড়িয়ে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওই বিদ্যুৎ দিয়ে গার্মেন্ট শিল্পে বৃহৎ পরিসরে বয়লার ও ডায়িং মেশিন চালু রাখা হয়। তার বাইরে ইস্পাত, ধাতব শিল্পসহ ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতেও গ্যাসের ব্যবহার রয়েছে। উদ্যোক্তাদের সেজন্য জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহকৃত গ্যাসের ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয়। কিন্তু শিল্পোদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই পর্যাপ্ত মাত্রায় গ্যাসের চাপ পাচ্ছে। এ নিয়ে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেও কোনো সমাধান মেলেনি। বরং বর্তমানে স্পট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিডের গ্যাস সরবরাহ আরো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পোদ্যোক্তারা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজিতে ঝুঁকছে। শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ায় ক্যাপটিভ চালু রাখতে শিল্পোদ্যোক্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে ডিজেলের তুলনায় এলপিজিতে খরচ কিছুটা সাশ্রয়ী। তাছাড়া এলপিজি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখাও সম্ভব। সেজন্যই শিল্প-কারখানা পরিচালনায় এলপিজি ব্যবহার শুরু হয়েছে। ওই লক্ষ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এলপিজি ব্যবহার করতে অবকাঠামোও নির্মাণ করছে। কারণ দেশে বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৮৫ টাকা। আবার ভর্তুকি দেয়ার পরও শিল্প খাতে প্রতি এমএমবিটিইউ গ্যাস ৪ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তাদের জ্বালানি ব্যয় অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দাঁড়িয়েছে। তাতে ব্যাপক হারে উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম অনেক বেশি হলেও এলপিজির কাঁচামালের দাম এখন কমছে। সৌদি আরামকোর মূল্যতালিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চলতি মাসে দেশে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ১০২ টাকা ৮৮ পয়সা নির্ধারণ করেছে। আর অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী দামেই খাতসংশ্লিষ্টরা এখন এলপিজি সংগ্রহ করতে পারছে। সেজন্যই ইতোমধ্যে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের অনেক শিল্প-কারখানায় এলপিজির ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ওসব এলাকার গার্মেন্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা এখন বয়লার ও ড্রায়ার মেশিন পরিচালনায় প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে এলপিজিকেই বেছে নিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে জ্বালানি সংকট শুরুর অনেক আগে থেকেই অবৈধ সংযোগের কারণে পাইপলাইনে বৈধ শিল্প গ্রাহকরা গ্যাসের চাপ পাচ্ছিল না। কারণ একটি লাইন থেকে অনেকগুলো অবৈধ লাইন তৈরি হলে সেখানে গ্যাসের চাপ কমে যায়। তাছাড়া চাপ বাড়াতে একশ্রেণির সংযোগদাতা মাসে মাসে চাঁদাও আদায় করছিলেন। ফলে গ্যাসের ক্রয়মূল্যের বাইরেও ওই বাবদ শিল্পমালিকদের ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আর শিল্পোদ্যোক্তারা উদ্যোক্তারা এতোদিন শিল্প খাতে এলপিজি ব্যবহার নিয়ে বেশ অনীহা দেখিয়েছে। মূলত দাম ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ শঙ্কার কারণে পণ্যটি ব্যবহারে ইতস্ততা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশে এলপিজি ব্যবসা বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে। এলপিজি এখন দেশের সব জায়গায়ই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এখন গ্রাহকের কাছে পণ্যটি পৌঁছে দিতে অপারেটররা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মূলত ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ার কারণেই উদ্যোক্তাদের কাছে এলপিজির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর ব্যবহারে খরচ ডিজেলের তুলনায় কম। আবার পাইপলাইনের গ্যাসের চেয়ে খরচ বেশি হলেও এলপিজি তুলনামূলক বেশি সহজলভ্য। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উদ্যোক্তারা এখন কারখানায় এলপিজি অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করছে। আর সেক্ষেত্রে এলপিজি অপারেটররা কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
এদিকে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) তথ্যানুযায়ী, দেশের বাজারে এখন এলপিজি অপারেটর হিসেবে ২৭টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে। তার মধ্যে ২০টি আমদানিকারক অপারেটর হিসেবে ব্যবসা করছে। প্রতি বছর দেশে ১১ লাখ টনের বেশি এলপিজি আমদানি হয় আর এলপিজির গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখ। এখন পর্যন্ত ওই খাতে সাড়ে চার লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এলপিজি ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর দামের তারতম্যের কারণেও এলপিজি এখন ডিজেলের তুলনায় সাশ্রয়ী। ফলে এলপিজি ব্যবহার নিয়ে শিল্প খাতে এক ধরনের আবেদন তৈরি হয়েছে। বৃহৎ পরিসরে না হলেও বয়লার, বার্নার ও বেকারিতে এ ধরনের সংযোগ বাড়ছে। তবে কারিগরি ও অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চেষ্টা চলছে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এলপিজির ব্যবহার আরো দ্রুত বাড়ানো যায়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক জানান, ডিজেল বা ফার্নেস অয়েলের জায়গায় এলপিজিতে জেনারেটর চালানোর প্রযুক্তি এখনো সহজলভ্য নয়। তবে গ্যাসের চাপস্বল্পতা মোকাবেলায় এ ধরনের প্রযুক্তি বেশ ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ শিল্পমালিকরাও কারখানা পরিচালনায় গ্যাসের চাপজনিত ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে পারে।