• মঙ্গল. সেপ্টে ১৬, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

হুইলচেয়ারের অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটছে রেখা খাতুনের

নুরনবী মিয়া, স্টাফ রিপোর্টার: 
১৫ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী রেখা খাতুন, যিনি হাঁটতে বা নিজের হাতে খেতে পারেন না, তার দিন কাটছে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে। নানীর একমাত্র ভরসায় তার জীবন চললেও, একটি হুইলচেয়ারের অভাবে তার দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ি ইউনিয়নের উচা ভিটা গ্রামে নানী লাভলী বেওয়ার জরাজীর্ণ সরকারি ঘরে ছোট ভাই গোলাম রাব্বি (১২) ও নানী লাভলী বেওয়ার সাথে তার বসবাস।

রেখার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগে। বাবা এনামুল হক তালাকের পর অন্যত্র বিয়ে করে ঢাকায় থাকেন। অন্যদিকে মা ববিতা খাতুনও আরেক জায়গায় বিয়ে করেছেন। বাবা মাঝে মাঝে এলেও, রেখা ও তার ছোট ভাই গোলাম রাব্বিকে দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে নানী লাভলী বেওয়ার ওপর। গোলাম রাব্বি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়লেও, রেখাকে নিয়ে নানীর জীবনযুদ্ধ চলছে প্রতিদিন।

৬০ বছর বয়সী লাভলী বেওয়া বয়সের ভারে নুব্জ, কোনো কাজ করতে পারেন না। নিজস্ব জমিজমা না থাকায় অন্যের কাছে সাহায্য বা ভিক্ষা করে কোনোমতে দিন চলে। তার সবচেয়ে বড় কষ্ট, প্রতিবন্ধী নাতনি রেখাকে কোলে করে ঘরের বাইরে আনা-নেওয়া করা। তিনি বলেন, “সকালে নাতনিকে কোলে করে রাস্তার পাশের একটি চেয়ারে বসিয়ে রাখি, যাতে সে কিছুটা আলো-বাতাস পায়। আবার বিকেলে কোলে করে ঘরে নিয়ে যাই। কিন্তু তারও তো ইচ্ছা হয় একটু আশেপাশে ঘুরে দেখার। কিন্তু আমি আর কত পারবো?”

প্রতিবেশী শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, “রেখাকে দেখে খুব কষ্ট হয়। সারাদিন ওই চেয়ারে বসে থাকে। তার যদি একটি হুইলচেয়ার থাকত, তাহলে যেকোনো কেউ তাকে ঠেলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে পারত।” 

আরেক প্রতিবেশী সুলেমান আলী বলেন, “লাভলী বেওয়ার কষ্ট সীমাহীন। তিনি নিজেই চলতে পারেন না, তার উপর প্রতিবন্ধী নাতনিকে কোলে করে ঘর-বাহির করতে হয়। কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা যদি একটি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে এই অসহায় পরিবারটির অনেক উপকার হতো।”

চোখের জল মুছতে মুছতে লাভলী বেওয়া বলেন, “আমার নামে প্রতিবন্ধী ভাতা আছে, তিন মাস পরপর আড়াই হাজার টাকা পাই। কিন্তু তা দিয়ে ওষুধপত্র কিনতেই শেষ হয়ে যায়। এই বয়সে কাজ করতে চাইলেও কেউ কাজ দিতে চায় না। তাই মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো যদি একটু নজর দিত আর আমার নাতনির জন্য একটা হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমার অনেক উপকার হতো।”