• সোম. সেপ্টে ১৫, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

কুড়িগ্রামে সারের তীব্র সংকট

সেপ্টে ১৫, ২০২৫ #কুড়িগ্রাম, #কৃষক
কুড়িগ্রামে সারের তীব্র সংকট

স্টাফ রিপোর্টার:
কু‌ড়িগ্রা‌মে চল‌তি আমন মৌসুমে কৃষক‌দের মা‌ঝে সা‌রের তীব্র সংকট দেখা দি‌য়ে‌ছে। এক‌দি‌কে ডিলার কা‌ছে সার মিল‌ছে না, অন্যদিকে ‌খোলা বাজা‌রে চড়া দা‌মে কিন‌তে হ‌চ্ছে সার। এ পরি‌স্থি‌তি‌তে তা‌দের মা‌ঝে ক্ষোভ সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। এ ঘটনায় সা‌রের দা‌বি‌তে বি‌ক্ষোভ ও সড়ক অব‌রোধের ম‌তো কর্মসূ‌চিও কর‌ছেন তারা।

কৃষকরা জানান, ডিলারদের গুদামে পর্যাপ্ত সার থাকলেও তারা কৃষকদের কাছে সরবরাহ না করে কৃত্রিম সংকট তৈ‌রি করছেন। খোলা বাজারে একই সার পাওয়া যাচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। ফ‌লে বাধ‌্য হ‌য়ে বে‌শি দা‌মে সার কিন‌ছেন তারা।

তা‌দের অভিযোগ, এর পেছনে ডিলারদের সিন্ডিকেট ও কৃষি অফিসের গাফিলতি র‌য়ে‌ছে ব‌লে দা‌বি তা‌দের ।

জানা গে‌ছে, সরকারি নির্ধারিত ২৭ টাকা কে‌জি দ‌রে প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার বিক্রির কথা এক হাজার ৩৫০ টাকা, ২০ টাকা কে‌জি দ‌রে এমও‌পি সা‌রের বস্তা এক হাজার টাকা, ২৭টাকা কে‌জি দ‌রে টিএস‌পি সা‌রের বস্তা এক হাজার ৩৫০ টাকা ও ২১ টাকা কে‌জি ডিএপি প্রতি বস্তা এক হাজার টাকা দরে বি‌ক্রি হওয়ার কথা।

কিন্তু স‌রেজি‌মেন খোঁজ নি‌য়ে জানা গে‌ছে, ডিলার‌দের কা‌ছে সার পাওয়া না গে‌লেও ‌খোলা বাজা‌রে ২৭ টাকা কে‌জি দ‌রের প্রতি কে‌জি ইউরিয়া সার বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ৩০ টাকা, টিএস‌পি ৩৭ টাকা, ডিএপি ২৮টাকা ও এমও‌পি ২৮ টাকা।

উলিপু‌রে হা‌তিয়ার চর শ‌্যামপুরের কৃষক ফুলজার হো‌সেন ব‌লেন, এক একর ৩৫ শতক জ‌মি‌তে আমন ধান রোপণ ক‌রে‌ছি। কিন্তু এসময় স‌্যা‌রের দরকার। বি‌ভিন্ন দোকানে ঘু‌রে এক হাজার ৪৪৫টাকা দ‌রে দুই বস্তা সার নি‌য়ে‌ছি। ডিলার‌দের কা‌ছে সার নেই। খোলা বাজা‌রে বে‌শি দামে পাওয়া যায়।

এদি‌কে, গত ১৪ সে‌প্টেম্বর (রোববার)  ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের শহীদ মোড় এলাকায় ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা সড়ক অব‌রোধ ক‌রেন তারা। এ সময় সড়‌কের দুই পাশে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়ে। প‌রে ইউএনওর আশ্বাসে সড়ক থে‌কে স‌রে যান বি‌ক্ষোভকারীরা।

এ ছাড়া কৃ‌ত্রিম সার সং‌কট সৃ‌ষ্টির প্রতিবা‌দে মঙ্গলবার (১৬ সে‌প্টেম্বর) কু‌ড়িগ্রাম শহ‌রের শাপলা চত্ব‌রে রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন না‌মে এক‌টি সংগঠন বি‌ক্ষোভ সমা‌বেশ ঘোষণা ক‌রে‌ছে।

আন্দোলনকারী ভূরুঙ্গামারীর কৃষক আজহার আলী, জম‌শেদ আলী জানান, এখানকার ডিলার আব্দুল মান্নান কৃষক‌দের কা‌ছে সার বি‌ক্রি কর‌তে চান না। আমরা সার কিন‌তে গে‌লে টালবাহানা ক‌রেন। কিন্তু সেই সার খোলা বাজা‌রে বে‌শি দা‌মে কিন‌তে হয়। বাধ‌্য হ‌য়ে সড়ক অব‌রোধ ও বি‌ক্ষোভ ক‌রি।

ডিলারদের এক‌টি সূত্র জানান, আগস্ট ও সে‌প্টেম্বর মা‌সে সা‌রের চা‌হিদা কিছুটা বে‌শি র‌য়ে‌ছে। কিন্তু চা‌হিদা অনুযায়ী সার না পাওয়ায় এই সংকট সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে।

নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক এক ডিলার ব‌লেন, চল‌তি মা‌সে টিএস‌পি ২১ বস্তা, এম‌পিও ১০৩, ডিএপি ১০৩ ও ইউরিয়া ৭১০ বস্তা বরাদ্দ পে‌য়ে‌ছি। যা চা‌হিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

কু‌ড়িগ্রা‌ম সদর উপ‌জেলার চর যাত্রাপু‌রের কৃষক আফজাল হো‌সেন, মোকারক আলী, আব্দুস সামাদ ব‌লেন, এ সব ঘটনা কৃষি অফিস জেনেও কার্যকর কো‌নো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে তা‌দের তদারকি নেই। ডিলারদের কারসাজি রোধে নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ডিলারদের সঙ্গে তাদের গোপন সমঝোতা আছে ব‌লেও দা‌বি ক‌রেন তারা।
কু‌ড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবা‌ড়ি) উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুদ রয়েছে। একটি সিন্ডিকেট চক্র বেশি লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের তদারকি বা মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। ত‌বে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি সার মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।