সাওরাত হোসেন সোহে,ল চিলমারী:
সংসার শুরু করে দেখে নানান স্বপ্ন, সাজিয়ে তোলে বসত বাড়ি, সুখে থাকার জন্য চেষ্টা আর পরিশ্রম করে চরাঞ্চলের মানুষগুলো। কিন্তু সেই সুখ, শান্তি আর সাজানো গোছানো সংসার সাথে স্বপ্ন নিমিষেই ভেঙ্গে ভেসে নেয় নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গনে নিঃস্ব হাজার হাজার পরিবার গুলো দিশাহারা হয়ে পড়লেও নেই সঠিক কোন পদক্ষেপ। ফলে প্রতিবছর হাজারো একর ফসলি জমিও বিলিন হচ্ছে নদী গর্ভে, শতশত পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে, বাড়ছে দ্রারিদের হার। চরাঞ্চলের মানুষ ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে চায়, চায় সুখের সংসারে স্বপ্ন বুনতে, ফসল ফলিয়ে দেশ-বিদেশে রপ্তানী করতে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামের চিলমারী নয়ারহাট, চিলমারীসহ যুগযুগ ধরে টিকে থাকা চরাঞ্চল ভাঙ্গছে। ভাঙ্গনের তান্ডব শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র। গত ১ মাসে পানি কমা বাড়ার মধ্য দিয়ে চিলমারী ইউনিয়নের দুটি গ্রামের প্রায় ৩শতাধিক পরিবার, নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ি ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে তাদের সাজানো গোছানো সংসার, ভেঙ্গে দিয়েছে স্বপ্ন গুলো। শতশত পরিবার তাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে করছে মানবেতর জীবন যাপন। ভাঙ্গনে পরিবার গুলো শুধু বসতবাড়ি আর সাজানো সংসার হারায়নি, হারিয়েছে দীর্ঘদিনের এক সঙ্গে কাটনো বন্ধন। ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়া বেশির ভাগ পরিবার গুলোর নেই মাথা গোজার ঠাঁই। ভাঙ্গনে শুধু বসতবাড়ি ভাঙ্গেনি, দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া পরিবার গুলো হারিয়েছে আশ্রয়।
ভাঙ্গনের শিকার আতারুল, মিন্টু জানান, প্রায় ৩০ বছর থেকে শাখাহাতি চরে বাস আমাদের কিন্তু নদী ভাঙ্গন সব কেড়ে নিল আর আমাদের আশ্রয়হীন করে দিলো। ত্রান আসলে বা কি? না আসলে বা কি? ত্রান না দিয়ে ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা করলে আর চরের ফসলি জমি রক্ষা করলে এই অঞ্চল থেকে বাহিরে ত্রাণ দেয়া যাবে জানালেন চরবাসী।
আঃ মজিদ আক্ষেপ করে বলেন, চিলমারী বিভিন্ন চরে যে ফসল ফলে কোটি কোটি টাকা আয় করে রপ্তানী করা সম্ভব কিন্তু চর রক্ষায় কখনো পদক্ষেপ দেখলাম না।
চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, চরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ দেয়া হলো, বিভিন্ন স্থাপনাও দেয়া হচ্ছে, হাজার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি কিন্তু চরগুলো রক্ষার জন্য কোন পদক্ষেপ নেই।
তিনি আরো জানান, কতবার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও আমলে না নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য কিছু জিও ব্যাগ দিলেও এটি ডাম্পিং করতে কোন খরচও দেয়া হয় না, চরের ভুখন্ড গুলো রক্ষা করা না গেলে এক সময় লক্ষ লক্ষ টন ভুট্টাসহ মসলা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন কমে যাবে, খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে।
কথা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে এবং ভাঙ্গনের শিকার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রকৃত তালিকা করে তাদের সহায়তা করা হবে।
১ মাসে চার শতাধিক পরিবারের সংসার আর স্বপ্ন নদী গর্ভে
