• বৃহঃ. জুন ২৬, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা

সেপ্টে ১২, ২০২০

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিচ্ছন্ন কর্মী দ্বারা চলছে চিকিৎসা সেবা। মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান দায়িত্বরা। আর দেখভালের অভাবে নিয়মিত খোলা হয় না জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গুলো। ফলে সরকারের ভিশন মানুষের দৌঁড় গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্য ব্যহত হচ্ছে কুড়িগ্রামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চাশ উর্দ্ধো একজন মহিলা মিনা রাণী ভবনে ঝাড়ু দেবার কাজ করছেন। পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করেই তিনি চিকিৎসা দানে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। প্রেসক্রিপশন করতে না পারলেও রোগীর সমস্যা শুনেই চিকিৎসা দেন। বেশ কিছু ঔষধের নামও মুখস্থ। গেল তিন বছর ধরে মাত্র ৫শ টাকায় কাজ করেন পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে। জানা গেল ডাক্তার ডেপুটেশনে অন্যত্র সুবিধা ভোগ করছেন। উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট থাকলেও তারা নিয়মিত নয়। ফলে মিনা রাণীই রোগীদের চিকিৎসা দেন। তারা মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান। এই চিত্র নাগেশ^রী উপজেলার বল্লভের খাস ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বল্লভের খাস ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
পরিচ্ছন্ন কর্মী মিনা রাণী বলেন, ৩বছর থেকে কাজ করছেন। রোগীর চাপ থাকলে তিনিই ডাক্তার কে সহযোগিতা করেন। মাঝে মধ্যে ডাক্তার না আসলে রোগীর ওষুধ দিয়ে থাকেন বলে জানান।
একই উপজেলার জনবল না থাকায় মূল ভূ-খন্ড হতে বিচ্ছিন্ন নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এই ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজ্জাক বলেন,বিগত কয়েক বছর আগে সপ্তাহে একদিন করে খোলা হতো এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু দীর্ঘ দিন আর এটা খোলা হয় না। ফলে এই এলাকার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে গেলেও টাকার অভাবে তা পায় না।
কেদার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়,তালা বদ্ধ ভবন। জানালার গ্লাস ভাঙ্গা। ভিতরে কক্ষে রোগীদের জন্য দেয়া বেড ধুলাবালি দিয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। অবহেলা আর অযত্নে মরিচিকা ধরে নস্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের দেয়া কোটি-কোটি টাকা সরঞ্জামাদী। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সামনের জায়গা দখল করে দোকান ঘর তৈরি হয়েছে। সেখানে শুধু মাত্র চলাচলের জায়গা রয়েছে। সরকারি ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন খোলার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিনামূল্যে ২২ প্রকার ঔষধ এই স্বাস্থ্য সেবা থেকে দেয়ার কথা থাকলেও রোগীদের না দিয়ে নিয়মিত বিতরণ দেখিয়ে তা বাইরে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি বাইরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন দারিদ্রপীড়িত এই জনপদের মানুষ। বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায় জেলার সিংহভাগ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গুলোর করুণ অবস্থা।
বল্লভেরখাস ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও চালু না থাকায় তার ইউনিয়নে চরাঞ্চলসহ গ্রামীণ জনপদের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বলেন,তার ইউপি ভবন না থাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দোতলায় পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাঈল হোসেন ইউসুফ বলেন,বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেন না। তিনি বলেন,সীমান্ত আর নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকার গরিব মানুষ সরকারের দেয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, ৮ উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে-৫৮টি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধিনে ৪০টি এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনে রুলার ডিসপেনসারি (আরডি)-১৮টি। সেগুলো হচ্ছে-সদর উপজেলার পাঁচগাছি। উলিপুরের দলদলিয়া, দুর্গাপুর, পান্ডুল। ভূরুঙ্গামারীর শিলখুড়ি,বলদিয়া, চরভূরুঙ্গামারী,বঙ্গসোনাহাট। নাগেশ^রীর সন্তোষপুর, ভিতরবন্দ, কেদার, বল্লভের খাস। রাজারহাটে ছিনাই, বিদ্যানন্দ,উমর মজিদ,নাজিম খাঁ। চিলমারীর রমনা এবং রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
মেডিকেল অফিসার পদ ৩৫টির মধ্যে শূণ্য ২১টি। উপ-সহকারি ৪০টি পদের মধ্যে শূণ্য ১১টি। শূণ্য রয়েছে ফুলবাড়ির বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড়, কাশিপুর। নাগেশ^রীর নারায়ণপুর, নুনখাওয়া, কালিগঞ্জ। চিলমারীর নয়ারহাট। রৌমারীর চরশৌলমারী এবং শৌলমারী। ভূরুঙ্গামারীতে তিলাই এবং পাথরডুবি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। নদী ভাঙ্গনে ইতিপূর্বে বিলিন হয়েছে চিলমারী অস্টমির চর, রমনা এবং রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা: নজরুল ইসলাম বলেন,দু’বিভাগের কর্তৃত্ব থাকায় অনিয়মের দায় একক ভাবে নিতে রাজি নন তিনি। জনবল সংকট এবং কোভিড-১৯ এর জন্য চিকিৎসা সেবা দানে কিছুটা ব্যহত হবার কথা স্বীকার করেন তিনি। দ্রুত এসব সমস্যা কেটে যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ব্যবস্থা নেবার আশ^াস দেন।