• মে ৬, ২০২৪ ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়া কোটি টাকার বেড

সেপ্টে ১৪, ২০২০

অযত্ন আর অবহেলায় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আবাসিক হলের প্রায় ৮০০টি স্টিলের বেড। এগুলোর দাম সোয়া কোটি টাকারও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র ক্রয় করায় এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় মূলত স্টিলের এই বেডগুলোসহ অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনের অংশে প্রায় ৫০০টি এবং পেছনের অংশে প্রায় ৩০০টি স্টিলের বেড ফেলে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় রোদ, বৃষ্টি এবং ধুলোবালির প্রভাবে এসব বেডে একদিকে যেমন মরিচা পড়তে শুরু করেছে অন্যদিকে বেডগুলোকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ঝোপঝাড়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বশেমুরবিপ্রবির অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুই বছরে এসব বেড ক্রয় করা হয়েছে। এ সময়ে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে ১১টি ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে মোট ৪ কোটি ৪৮ লাখ ২৭ হাজার ৬২৫ টাকায় দুই হাজার ৬৭০টি বেড ক্রয় করা হয়েছিল। প্রতিটি বেডের গড় মূল্য ১৬ হাজার ৭৮৯ টাকা। এর মধ্যে শুধু ২০১৯ এর ২৮ মে এবং ২৬ জুন দুই দিনেই এক হাজার ৯৪৫টি বেডের অর্ডার দেয়া হয়েছিল। তবে এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে ৪০০ আসনবিশিষ্ট মাত্র দুটি হল নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত পূর্বনির্মিত হলগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস হল থেকে ২০টি বেডের চাহিদা জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বেড ক্রয় করায় এখন প্রায় ৮০০ বেড নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য এক কোটি ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন নির্মিত হলগুলোর জন্য ১০০০-১৫০০টি বেড যথেষ্ট ছিল। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি বেড অর্ডার করায় সেগুলো এখন নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সকল বেড জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা হয়। অবশ্যই এই টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক হাজার ৯৪৫টি বেডের ওয়ার্ক অর্ডার প্রদানকারী প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার বলেন, তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের নির্দেশেই এ সকল ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করেছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আমি অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে রাজি হইনি। পরে প্রকল্প পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করি। আসবাবপত্র সংরক্ষণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোরের দায়িত্বে থাকা মো. সাইফুল্লাহ বলেন, স্টোরের জায়গা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনকে গত দুই বছরে প্রায় পাঁচবার চিঠি দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা কাঠের বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তবে এখনও স্টোরের জায়গা পর্যাপ্ত নয়। স্টোরের জায়গা বৃদ্ধি পেলেই অবশিষ্ট আসবাবপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ সম্ভব হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুব জানান, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোপার্টি, জনগণের প্রোপার্টি, দেশের প্রোপার্টি। এগুলো এভাবে নষ্ট হতে দেখে আমি অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ন। কিন্তু এ বিষয়ে আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিব না। রিজেন্ট বোর্ডের মিটিংয়ের মাধ্যমে এ সকল আসবাবপত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।