• নভেম্বর ২১, ২০২৪ ২:৫৯ অপরাহ্ণ

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলন: সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

অবৈধ বালু উত্তোলন

সারাদেশেই অবৈধভাবে বালি ও পাথর উত্তোলনের খবর পাওয়া যায়। দেশের পর্যটন খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সিলেটে এর মাত্রা আরও বেশি হয়ে উঠেছে। আদালতের নির্দেশনার পরও সিলেটে বালি ও পাথরখেকোদের তাণ্ডব বন্ধ হচ্ছে না। একইসঙ্গে জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া) হিসেবে গেজেটভুক্ত করার পরও জেলা প্রশাসনের নথিপত্রে জাফলংকে কেন ‘পাথর কোয়ারি’র তালিকায় রাখা হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও জরুরি। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ‘বোমামেশিনের’ মতো শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে বালি ও পাথর উত্তোলনের পেছনে নাকি রয়েছে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির ঘটনা। আশ্চর্যজনক হল, প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সেখানে উপজেলা পরিষদের ট্যাক্সের নামেও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ থেকে এটা স্পষ্ট- উচ্চ আদালতের রায়ে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন তো করছেনই না; উপরন্তু নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গেও। বিষয়টি অনভিপ্রেত; একইসঙ্গে অনৈতিকও বটে। আশঙ্কার বিষয় হল, কোনো নিয়মনীতি না মেনে পাথর উত্তোলন করায় এরইমধ্যে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান সিলেটের জাফলং। পর্যটন শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বের অনেক দেশ, এমনকি আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারত এ খাতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে বাংলাদেশেরও খ্যাতি রয়েছে। পর্যটন স্থানগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আমরাও গ্রহণ করতে পারি। দুঃখজনক হল, আমরা কখনোই পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব উপলব্ধির চেষ্টা করিনি। তা না হলে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান জাফলং বিরানভূমিতে পরিণত হওয়ার দুঃসংবাদ আমাদের শুনতে হতো না!
বস্তুত গুটিকয়েক অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীর কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে জাফলংয়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও পর্যটনের গুরুত্ব; সেই সঙ্গে নিরীহ শ্রমিকের প্রাণ। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা, উতমাছড়া, ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছানাকান্দি, কানাইঘাটের লোভাছড়া ও জৈন্তার শ্রীপুরে পাথর উত্তোলনের সময় অন্তত ৯৪ শ্রমিক মারা গেছেন। পাথর কোয়ারিগুলোয় শ্রমিকদের মৃত্যুর মূল কারণ অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ পন্থায় পাথর উত্তোলন-এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে কয়েক বছর আগে দুটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে কমিটিদ্বয় পরিবেশ ধ্বংস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট ও শ্রমিক হত্যাকারী অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছিল, যা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৮ সালে সিলেটের উন্নয়নে ১২টি প্যাকেজ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। সেসব প্রকল্পের মধ্যে এখানকার পর্যটন স্থানগুলোর উন্নয়ন ও উৎকর্ষ বৃদ্ধি ছিল অন্যতম। বলার অপেক্ষা রাখে না, গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সুষম উন্নয়নের ধারণাটি যেমন বাস্তব ভিত্তি পেত, তেমনি এর ইতিবাচক প্রভাব স্থানীয় পর্যায়ে দৃশ্যমান হতো এবং এটি অবৈধ পাথর ও বালি উত্তোলন ব্যবসার অবসান ঘটাতেও ভূমিকা রাখত। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক না হলে বিপদ আমাদের পিছু ছাড়বে না। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সিলেটে বেআইনিভাবে পাথর ও বালি উত্তোলন রোধসহ সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে-এটাই প্রত্যাশা।