• বৃহঃ. জুন ১৯, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই আন্দোলন শুরু আজ

ফেব্রু ১৭, ২০২৫
জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই আন্দোলন শুরু আজ

বিশেষ প্রতিবেদক:
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলন শুরু হচ্ছে আজ। আন্দোলনকে ঘিরে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ৫কিলোমিটার পর্যন্ত তিস্তা নদীর পাড়ে বুড়িরহাট এলাকায় লাখ লাখ মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এই আন্দোলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান একমত প্রকাশ করেছেন।
রংপুর অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবী তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নেই তিস্তা নদীর দুইপাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘব করতে পারে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। সেই সাথে পাল্টে যাবে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা। তাই এই ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষ প্রতীক্ষা করছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আঁধার কেটে কবে আলোর মুখ দেখবে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিস্তা আমাদের জীবনরেখা এর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতেই হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে যেমন পরাজিত করেছি, তেমনই তিস্তাকে শাসন করে মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, যারা দীর্ঘ ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছে, জনগণের দিকে তাকায়নি। আট হাজার কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল চীন। তারা সমীক্ষা ও ডিজাইনও করেছিল, কিন্তু সরকার ভারতের পররাষ্ট্রনীতির কাছে নতজানু হওয়ার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আর আমরা ভারতের কথা শুনবো না। বিদেশ যদি সাহায্য না করে, বাংলাদেশের অর্থেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং সমস্বরে দাবি উত্থাপন করি, তাহলে যেকোনো সরকারই আমাদের দাবী মানতে বাধ্য হবে।
জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনায় রয়েছে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে ব্রক্ষ্মপুত্রের সংযোগস্থল পর্যন্ত নদী খনন করা। নদীর দুই তীর রক্ষা বাঁধ, নদী ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন হবে সেই মাটি নদীর দুপাশে ভরাট করে ইপিজেট, সোলার পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ ছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তিস্তার ডালিয়া পয়েন্ট ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের সেতুর উপর তিস্তা নদী পরিদর্শন করেন। সে সময় চীনা রাষ্টদূতের এলাকা পরিদর্শনের ফলে তিস্তা পাড়ের মানুষ আঁধার কেটে আলোর হাতছানি দেখেছিলেন। পরে সেই পরিদর্শন ও পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।
বিগত সরকারও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।
শুকনো মৌসুমে তিস্তার চারিদিকে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকায় পানি অনেক নিচে নেমে যায়। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা প্রকল্পে প্রতিবছরই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারেজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়ে। তখন ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট রাতদিন খুলে রেখেও পানি সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমে তিস্তা অববাহিকার মানুষের সময় কাটে দীর্ঘশ্বাসে। শুকনো মৌসুমে ভারতে পানির ওপর নির্ভরতা থাকায় তিস্তা অববাহিকার ৫ জেলা নীলফামরী, লালমনির হাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়ন হলে শুকনো মৌসুমে ভারতে কাছে পানির জন্য হাত পাততে হবে না।
এরই প্রেক্ষিতে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলন সোম ও মঙ্গলবার (১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি) দু’দিন ব্যাপী তিস্তা পাড়ের মানুষসহ লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ী, রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেরার সাধারণ মানুষ রাজারহাটের চর খিতাবখাঁ বুড়িরহাট এলাকায় হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে তিস্তা ব্রীজ পর্যন্ত এলাকায় আন্দোলন শুরু করবেন।
এ কারণে বেশ কিছুদিন ধরে এসব এলাকায় ব্যাপকহারে মাইকিং পোস্টারিং করে প্রচার-প্রচারনা চালানো হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি মেনে না নিবেন ততদিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষ মাঠে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আয়োজকরা জানান, জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই আন্দোলনে ইতোমধ্যে জেলা উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। এসকল কমিটির মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সম্ভব বলে জানান বেশ কয়েকটি কমিটির মূখপাত্র।