• এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ২:০২ পূর্বাহ্ণ

মহামারি করোনাভাইরাস: বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে

সেপ্টে ২১, ২০২০

প্রাণঘাতী সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবিস্নউএফপি)। সহায়তার হাত বাড়িয়ে মানুষের বেঁচে থাকা নিশ্চিতে বিশ্বের সব ধনী দেশ ও কোটিপতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান ডেভিড বেসলে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিশ্বের ৪০ দেশে দুর্ভিক্ষ প্রায় আসন্ন এবং সংঘাতে বিধ্বস্ত দেশগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো প্রায় দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এই দেশটির ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে তহবিল সঙ্কটের কারণে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনে মানবিক ত্রাণ সহায়তা কাটছাঁট করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ সুদানে লাখ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির ওপর একেবারে নির্ভরশীল বিশ্বের ৩ কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার। এই সহায়তা না পাওয়া গেলে এক বছরের মধ্যে তারা মারা যাবেন। এই তথ্য খুবই উদ্বেগজনক। এ ছাড়া করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু দেশ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে। করোনাভাইরাস সংকটের অর্থনৈতিক পরিণতি বিশ্বের ৬ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে চরম দারিদ্র্য বলতে ওই মানুষকে বলা হয়েছে, যিনি প্রতিদিন ১ দশমিক ৯০ ডলারের (১৬১ টাকা) চেয়ে কম অর্থে জীবনযাপন করেন। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক উৎপাদন পাঁচ শতাংশেরও বেশি সংকুচিত হবে। যা দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর গত তিন বছরে প্রচেষ্টা মুছে ফেলবে। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্ব পিছিয়ে পড়বে অন্তত ৫ বছর। এ কথা সত্য, করোনাভাইরাসের থাবায় ইতোমধ্যে লাখ লাখ জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চাপের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে, তা মারাত্মক। এর ফলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ একেবারে দরিদ্র হয়ে যাবে। আশার কথা, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার বাড়লেও বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই আমরা মনে করি। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি, এর বেশির ভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রম আয় বৃদ্ধি এবং বর্তমান সরকারের দরিদ্র-বান্ধব নানা ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে। ২০১০-২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমাচ্ছে। তবে দারিদ্র্য কমছে তুলনামূলক ধীরগতিতে। করোনাকালে দেশে দারিদ্র্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনতে সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এ ধরনের নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক। করোনাকালে সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছে। তবে করোনার জন্য বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে তার প্রভাব যে বাংলাদেশে পড়বে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সুতরাং আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।