ভূরুঙ্গামারী প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে আমন মৌসুমের ধান সংগ্রহ অভিযানে মাত্র ১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান সংগ্রহ অভিযান চলে। বাজার দরে চেয়ে সরকারি দর কম ও প্রচারণার ঘটতি সহ নানা কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনিচ্ছুক কৃষকরা।
খাদ্যগুদাম সূত্রে জানাগেছে, আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১১১ মেট্রিক টন। নির্ধারিত সময় শেষে মাত্র ১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। তবে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০১ মেট্রিক টন বেশি। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্র ছিল ৪ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন।
কৃষকদের অভিযোগ, বাজার দরের চেয়ে সরকারি দর বেশি হলে প্রকৃত কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রি করার সুযোগ পাননা। সে কারণে কৃষকরা গুদামের খোঁজ-খবর রাখেন না। ধান সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে তেমন প্রচারণাও চালানো হয়না। তাই অনেকে ধান সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে জানেন না। এছাড়া খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়। যেসকল কৃষক ইতিপূর্বে গুদামে ধান বিক্রি করেছেন তাদের রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার জানান, উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রায় ৮০ হাজার ২৫৩ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।
পাইকেরছড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, প্রত্যেক মৌসুমে ধান চাষ করি। খাওয়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু রেখে বাকি ধান বিক্রি করে দেই। গুদামে ধান বিক্রি করা অনেক ঝামেলা। প্রকৃত কৃষকরা গুদামে ধান দেয়ার পাত্তাই পায় না।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের এক কৃষক বলেন, কৃষকের নাম ব্যবহার করে কমিশনের বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। দু-একবার খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারিনি। শুনেছি লটারিতে নাম ওঠার পর গুদামে ধান বিক্রি করতে হয়। তাই আর খোঁজ-খবর রাখিনা।
তিলাই ইউনিয়নের কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, বাজারের চেয়ে গুদামে ধানের দাম কম। পাইকাররা বাড়ি থেকে বেশি দামে ধান নিয়ে যায়। সরকারি দামে গুদামে ধান বিক্রি করলে লোকসান হবে।
ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম (খাদ্য পরিদর্শক) বলেন, অনলাইন আবেদনের ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকের নিকট থেকে ধান কেনা হয়। প্রচার প্রচারণায় কমতি রাখা হয় না। কৃষকরা যাতে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হন সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল্লাহ আরেফিন বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ে ধান সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তবে দাম বাজারমূল্যের তুলনায় কম হওয়ায় কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।