• এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ১:৪৮ অপরাহ্ণ

নাগেশ্বরীতে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি

সেপ্টে ২০, ২০২০

হাফিজুর রহমান হৃদয়, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম):
কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ এবং উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সবকটি নদ-নদীর। পানির তীব্র স্রোতে শুরু হয়েছে নদীর তীব্র ভাঙ্গন। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ। গৃহহীন হয়ে পড়ছে শত-শত পরিবার। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও ফসল বিলীন হয়ে গেছে নদী ভাঙ্গনে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো। ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি আর সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তারা।
একদিকে করোনার প্রভাব অন্যদিকে নদীর ভাঙ্গনে সম্পদ হারিয়ে দিশাহারা মানুষজন অনেকটাই কর্মহীন। ফলে পরিবারের খাদ্যের জোগানে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে। এ যেন মড়ার উপর খড়ার ঘাঁ। ভাঙ্গন রোধে সরকারের হস্তক্ষেপ চান নদ-নদীর তীরবর্তী মানুষজন।
সরেজমিনে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুরিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানকার দুধকমর নদীর তীব্র ভাঙ্গনের চিত্র। যেনো নিমিষেই মানচিত্র থেকে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে সেখানকার জনপথ। স্থানীয়রা জানান গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে অর্ধশত একর ফসলি জমি, সুপারী বাগানসহ কয়েকটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটিও। এতে করে লোকালয়ে ঢুকছে বন্যার পানি। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে বামনডাঙ্গা নাছের মামুদ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বামনডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনছারহাট জামে মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফলে দ্রুত ভাঙ্গন রোধে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা। তবে ভাঙ্গন ঠেকাতে আনছারহাট এলাকার কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেললেও তা পানির তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছির বলেও জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে সরদারেরভিটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত আবু বক্কর সিদ্দিক। কিছু সময় অপেক্ষা করলেই হয়তো তার বাড়িটি গিলে ফেলবে রাঘব বোয়াল নামের দুধকুমর নদী। তার স্ত্রী বানেছা বেগম জানান, নানারবাড়ি থেকে ৮ শতক জমি পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে তাদের। দিনমজুরের কাজ করে স্বামী সন্তান নিয়ে দিন এনে দিন খেতেন তারা। কিন্তু সর্বনাশা দুধকুমর সে সম্বলটুকুও খেয়ে ফেলল। এখন কোথায় যাবেন কোথায় থাকবেন সেটাও বলতে পারেন না তারা। কথাগুলো বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
স্থানীয় লাভলু মিয়া, জানায় তাদের ঘর-বাড়ি ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। ভাঙ্গনের আসঙ্কা রয়েছে সুপারী বাগানসহ বিভিন্ন ফসলী জমিও। সবকিছু নদী গিলে ফেললে নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে তাদেরকেও।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, দুধকুমর নদের ভাঙ্গনে নাগেশ^রী উপজেলায় নুনখাওয়ায় ৬শ মিটার, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বাঁধসহ প্রায় দেড় হাজার মিটার, খেলার ভিটায় ২শ মিটার, নারায়ণপুরের ঝাউকুটি ৩শ ৫০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং বরাদ্দ পেলে ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।