• মার্চ ২৯, ২০২৪ ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থবির উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা

সেপ্টে ১৬, ২০২০

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে ৮ হাজার ৪২২ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারী, প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, জমি গ্রহণে জটিলতা, অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতাসহ নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা বিরাজ করছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫৯ কোটি ৮০ লাখ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩৮ কোটি ৩৭ লাখ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯২০ কোটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ১ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি চলছে। দীর্ঘ ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান উন্নয়নকাজ এক প্রকার বন্ধই রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর সবচেয়ে বড় বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির জন্য ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমদি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমির ওপর নতুনভাবে ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হবে। কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন ক্যাম্পাসে একাধিক একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য হল, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, মসজিদ এবং পরিবহন ও আধুনিক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। গত বছর বরাদ্দের সব টাকা খরচ করা হলেও চলতি বছর করোনার কারণে পুরো বরাদ্দ খরচ করা সম্ভব হয়নি। এখন এ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৬ শতাংশ। তাছাড়া ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি স্থাপনা নির্মাণসহ সার্বিক উন্নয়নে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসিক এবং অন্যান্য সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদান ও শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নেয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা ও করোনার কারণে কাজের অগ্রগতি এখনো ১০ শতাংশের নিচেই রয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২২ সাল নাগাদ ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই প্রকল্পে দুটি প্রশাসনিক ভবন (একটি ১০ তলা, অন্যটি তিনতলা) নির্মাণ, ১০ তলাবিশিষ্ট ৬টি একাডেমিক ভবন, ৮টি দোতলাবিশিষ্ট মাঠ গবেষণা, ১০ তলাবিশিষ্ট তিনটি হোস্টেল (একটি ছাত্রী, দুটি ছাত্র), শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ৬টি আবাসিক ভবন (পাঁচটি ১০ তলা, একটি ছয়তলা), ছয়তলাবিশিষ্ট টিএসসি কমপ্লেক্স ভবন, ৮তলাবিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন এবং নারীদের জন্য একটি সুইমং পুল নির্মাণ করা হবে। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কেও ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ ২ হাজার ৫০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম নির্মাণ, নবনির্মিত একাডেমিক ভবনটি ১০ তলায় বর্ধিতকরণ, প্রশাসনিক ভবন পাঁচতলা থেকে ১০ তলায় উন্নীতকরণ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরি ও হলগুলো পাঁচতলা থেকে ছয়তলায় বর্ধিতকরণ, অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। তাছাড়া ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ ২ হাজার ৫০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম নির্মাণ, নবনির্মিত একাডেমিক ভবনটি ১০ তলায় বর্ধিতকরণ, প্রশাসনিক ভবন পাঁচতলা থেকে ১০ তলায় উন্নীতকরণ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরি ও হলগুলো পাঁচতলা থেকে ছয়তলায় বর্ধিতকরণ, অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। তবে কাজের অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৮ সালের অক্টোবরে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ নামে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার অনুমোদন দেয় একনেক। যা ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করতে হবে। তবে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি স্থাপনে ১ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে দুই বছরে বিভিন্ন সমন্বয়হীনতায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি এখনো ১০ শতাংশের নিচে। তাছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ১০ তলা প্রশাসনিক ভবন, দুটি ১২ তলা একাডেমিক ভবন, ছাত্রদের একটি ১০ তলা ও ছাত্রীদের একটি ১০ তলা আবাসিক হল, একটি চারতলা টিএসসি, একটি চারতলা কনভেনশন সেন্টার, একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বেশকিছু খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০২২ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ, ১০ তলাবিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবন ও ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ, পাঁচতলাবিশিষ্ট দুটি ছাত্র হল ও দুটি ছাত্রী হল, পাঁচতলা পর্যন্ত দুটি ছাত্র হলের আনুভূমিক সম্প্রসারণ, ১০ তলাবিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, পাঁচতলাবিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ডরমিটরি ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট স্টাফদের আবাসিক ভবন, সোলার সিস্টেম স্থাপনসহ সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জানান, এ প্রকল্পে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমদি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত দুই বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় ৪৬ শতাংশ। করোনার কারণে উন্নয়ন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। আশা করা যায় সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। একই বিষয়ে করোনার মহামারীর মধ্যেই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক নাসির উদ্দিন জানান করোনার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় এ বছর ২০ শতাংশ কাজ কম হয়েছে। গত অর্থবছরে সরকার যা বরাদ্দ দিয়েছিল তার সব কাজই শেষ হয়েছিল। একই বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে এ ধরনের বড় বরাদ্দ সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো অর্থ ছাড়ে দেরি ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ করা যায়নি। প্রথম অর্থবছর অর্থ ছাড়ে দেরি করার কারণে খরচ করা যায়নি। ফলে কাজের অগ্রগতি হয়নি। সেজন্য ওই অর্থ ফেরতও দেয়া হয়েছিল। পরের অর্থবছরে করোনার কারণে নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়নি। মহামারী পরিস্থিতি সব উন্নয়ন প্রকল্পেই বাধা তৈরি করেছে। তবে ঘুরে দাঁড়াতে বিকল্প পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কাজকে আলাদা ভাগে বিভক্ত করে একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে শক্তিশালী তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি কাজগুলো সময়মতো শেষ করার পাশাপাশি মান তদারক করছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী জানান, ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে কিছুদিন হলো এ জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। আর্থিক কার্যক্রম সম্পন্ন হলে অগ্রগতি আরো বেশি হবে। প্রকল্পের দায়িত্ব সেনাবাহিনী নেয়ার পর কার্যক্রমে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। চলতি বছরেই প্রকল্পের দৃশ্যমান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। একই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর তুহিন মাহমুদ জানান, উন্নয়নের জন্য ২৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ১১৩ কোটি বরাদ্দ হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে তিন মাস উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তবে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন পাঁচতলা থেকে ১০ তলায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে আরো দোতলা ছাদ হয়ে গেছে। আর পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর তুহিন মাহমুদ জানান, উন্নয়নের জন্য ২৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ১১৩ কোটি বরাদ্দ হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে তিন মাস উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তবে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন পাঁচতলা থেকে ১০ তলায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে আরো দোতলা ছাদ হয়ে গেছে।