• এপ্রিল ২৮, ২০২৪ ১:১৬ অপরাহ্ণ

র‌্যাফেল ড্র ও সার্কাস বন্ধের নির্দেশ পুলিশ সুপারের

ফেব্রু ২০, ২০২৩

কুড়িগ্রামে শিল্প-বাণিজ্য মেলায় নানা অনিয়মসহ চলছে জুয়া-অর্থ লুট-পর্ব ২
বিশেষ প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এবং পৌর মেয়রের যৌথ ব্যবস্থাপনায় কুড়িগ্রামের শিল্প বাণিজ্য মেলার শর্ত ভঙ্গ করে জুয়া, সার্কাসসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির রিপোর্ট দৈনিক সকালের কাগজে রোববার প্রকাশিত হলে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। সোমবার পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বিষযটি আমলে নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে মেলায় র‌্যাফেল ড্র, সার্কাসসহ সকল ধরণের অনিয়ম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোহাম্মদ শাহরিয়ার নির্দেশ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে র‌্যাফেল ড্র ও সার্কাস বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য শর্ত ভঙ্গের বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরপরও সোমবার শহর ও বিভিন্ন গ্রামে দিনভর র‌্যাফেল ড্র ও সার্কাসে বিভিন্ন ধরণের নায়ক-নায়িকার আগমন জানিয়ে সর্বত্র চলেছে একাধিক মাইকিং। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মেলার অনিয়ম।
এদিকে এমনসব ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষজন। তারা বলেন, যারা মাদক, জুয়াসহ নানা অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ করেন এমন লোকজনও জড়িত রয়েছে এই শর্ত ভঙ্গের মেলায়। লোভে পড়ে মেলায় লোকজন যাওয়ায় শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
মেলায় আগন্তুক শম্ভু বর্মন বলেন, কুড়িগ্রামের লোক গরিব তাদের অনেকের টিকেট কাটার মতো টাকা নেই। আমরা কয়েকজন টিকেট কাটতে না পেরে মেলার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। কাজেই টিকেট ছাড়া মেলা প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক ছেলে মেয়ে পুরস্কারের লোভে বাবা-মায়ের টাকা চুরি করে মেলায় গিয়ে একাধিক টিকেট কাটছে। পুরস্কার না পেয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে তারা।
পৌরবাজারের ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী জানান, মেলার নামে জুয়া চলছে। সব মানুষ লোভে পড়ে সেখানে যাচ্ছে। শহরে তেমন লোকজন পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতা সংকটে আমাদের ব্যবসায়িক মন্দা যাচ্ছে। কাজেই জুয়া বন্ধ করতে হবে। আর রাত ৮টার পর মেলা বন্ধ রাখা উচিত।
মেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দর্শনার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কুড়িগ্রাম দারিদ্রপীড়িত এলাকা। এখানে বাণিজ্য মেলার নেওয়া অবৈধ। এ ছাড়াও টিকেট দিয়ে র‌্যাফেল ড্র নামক জুয়া চলছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মূলতঃ স্থানীয় শিল্পসামগ্রীর বিকাশে শিল্প বাণিজ্য মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় কোনো পণ্যই সেখানে প্রদর্শন বা বিক্রি হচ্ছে না। কুড়িগ্রামের সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে র‌্যাফেল ড্র’র নামে রমরমা জুয়া বাণিজ্য। উঠতি বয়সের ছেলেরা এবং সাধারণ মানুষ লোভে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে লটারী নামক জুয়ার খপ্পরে। চুরি ফিতা, আচার, চটপটি ও অন্যান্য সাধারণ দ্রব্য বেশি দামে বিক্রি করে পকেট কাটার নানা কৌশল মেলা জুড়ে। সার্কাস হলো অবৈধভাবে নতুন সংযোজন। মেলা পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রাম থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লটারীসহ মেলার ভিতর টিকেট কাটার (যাদু, সার্কাস) নানা আইটেম থাকলেও সরকারি কোষাগারে একটাকাও রাজস্ব জমা হচ্ছে না। মেলা অনুমোদনের ৩০টি শর্তাবলীর মধ্যে অধিকাংশ শর্ত ভঙ্গ করে প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মেলা থেকে কোটি টাকা লুটে নেয়ার ফন্দি এটেছে। লটারির লোভনীয় পুরস্কারের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। প্রতিদিনই মেলায় বিশাল প্যান্ডেল করে স্টেজে পুরস্কারের মোটরসাইকেলসহ আকর্ষনীয় পুরস্কার প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে লোভে পড়ে একজন দর্শনার্থী একজন মেলায় প্রবেশ করলেও টিকিট কাটছেন একাধিক। এভাবেই চলছে শিল্প বাণিজ্য মেলা। তবে লুটের টাকার ভাগ যাচ্ছে শ্রেণি বিশেষের পকেটে। এসব অপকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক অনুসন্ধান।
কুড়িগ্রামের সহজ সরল মানুষকে বোকা বানানোর নানা কৌশল এখনও বিদ্যমান রয়েছে। এটি কোনো সরকারি বা দলীয় অনুষ্ঠান না হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি চলছে উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে মেলার কার্যক্রম। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় মেলার সামনের সড়কে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। ফলে বিকেল থেকে ধরলা ব্রিজের উপর দিয়ে ফুলবাড়ী, নাগেশ^রী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় যাতায়াত বিঘ্নিত হয়ে পড়ছে।
মেলা পরিচালনাকারী প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর নিজস্ব খেলা ১২টি। ব্যাপক অনুসন্ধানে দেখা গেছে খেলার টিকেট ও মেলা প্রবেশের টিকেটসহ সব মিলিয়ে তার দৈনন্দিন আয় ৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অথচ কুড়িগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, ‘সরকারকে প্রতিদিন ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে এক হাজার টাকা করে জমা দেওয়া হয়। মেলা পরিচালনায় যে সমস্ত শর্ত দেওয়া আছে তা পুরোপুরি মানা সম্ভব নয়।’
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সামিউল হক নান্টু মেলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, র‌্যাফেল ড্র বা জুয়া এবং সার্কাস বন্ধে তার নির্দেশ মৌখিকভাবে নয় বাস্তবে সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। প্রশাসনের নজরদারিতে থাকতে হবে এই শিল্প বাণিজ্য মেলা।
চলবে…