সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী:
ব্রহ্মপুত্র ভাঙ্গন ও পানির গর্জন তোলা ঢেউ। শোঁ শোঁ শব্দের ভীতি নিয়ে পারাপার লক্ষ লক্ষ মানুষের। ব্রহ্মপুত্রের জলে জীবিকা নির্বাহ-দিনাতিপাত। ব্রহ্মপুত্রের পাড় জুড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরামহীন খেটে যাওয়া, পরিবার নিয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকা এ মানুষগুলোসহ উত্তরের জনপদ স্বপ্ন বুনছে ব্রহ্মপুত্রে। ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণের দাবি উঠা ও কার্যক্রম স্বপ্নটা ক্রমেই বড় হচ্ছে ভেতরে ভেতরে। স্বপ্ন বুনছে তারা, আরেকটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার। একটুখানি আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায় নিজেদের আধুনিক করার। ভালো কোনো কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেশি উপার্জন করে সুখে দিন যাপনের। ব্রহ্মপুত্র পাড় কেন্দ্রিক নিম্ন আয়ের মানুষের স্বপ্ন বেড়ে হচ্ছে এখন দ্বিগুন। তারা কল্পনায় দেখছে, কয়েক পুরুষ ধরে দেখে আসা অবহেলিত এই জনপদের অভূতপূর্ব উন্নয়ন। আর এই উন্নয়নের ধারায় খেটে খাওয়া মানুষের আগামী প্রজন্মও বেড়ে উঠবে আধুনিক পরিবেশে। স্বপ্ন দেখছে শিক্ষার্থীরাও উচ্চ শিক্ষার। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নেরও স্বপ্ন দেখছে এই অঞ্চলের মানুষ। ঘাটে ঘাটে ফেরি করে বেড়ানো এ মানুষেরাও কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছে ব্রহ্মপুত্র সেতুকে ঘিরে। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ব্রহ্মপুত্রের উপর সেতু আর স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। সেতুকে ঘিরে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে এমনটাই ধারনা এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ২টি উপজেলা রৌমারী ও রাজিবপুর ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে অবস্থিত। শুরু থেকেই রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাবাসীদের কয়েক ঘন্টা নদী পাড়ি দিয়ে চিলমারী হয়ে জেলা সদর কুড়িগ্রাম যেতে হয় বিভিন্ন কাজে। শুধু তাই নয় যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র অবলম্বন নৌকা হওয়ায় চিকিৎসা কিংবা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা বড়ই কঠিন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য। নৌকায় পাড়ি দিতে ঘটে নানা দুর্ঘটনা। নদী ভাঙ্গন আর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে বরাবরেই উন্নয়নের ছোয়া থেকে বঞ্চিত থেকেই যায় এই অঞ্চলের মানুষ। সকল সেক্টরে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাসহ এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশা দুর করতে ব্রহ্মপুত্রের উপর সেতু নির্মান পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুত নিয়ে কাজ শুরু করেছেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রানালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন। ব্রহ্মপুত্রের উপর সেতু নির্মানকে কেন্দ্র করে এলাকায় দেখা দিয়েছে আনন্দের জোয়ার। শুধু এলাকায় নয় পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বইছে উল্লাস। সেতুটি নির্মান হলে চিলমারীসহ জেলার সাথে রাজধানীর দুরত্ব কমবে কয়েক ঘন্টার পথ, কমবে পরিবহন খরচও। উত্তরাঞ্চলবাসী দেখবে সফতার মুখ। সেতুটি নির্মিত হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সড়কপথের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর জেলাতেও গড়ে উঠবে শিল্প-কলকারখানা। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ সহজ হবে। ব্রহ্মপুত্র সেতু ও রেল সড়ক চালু হলে রৌমারী স্থলবন্দর ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে মালপত্র আমদানি-রপ্তানি খুবই সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হবে। বাড়বে পর্যটনের সম্ভাবনা। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। মরণাপন্ন রোগী নিয়েও আর নৌকাঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না। স্থানীয়রা বলছেন, দেশের বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রের ওপর সেতু হলে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের একমাত্র সড়ক সেতু যমুনা সেতুর ওপর প্রায় ৪০ ভাগ পরিবহন চাপ কমে আসবে। আর সেতুতে রেল যোগাযোগ যুক্ত করলে মানুষের যোগাযোগ ব্যয়ও কমে আসবে বাঁচবে সময়। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সেতু হলে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও সেতুর গুরুত্ব পাবে। কেননা ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্যসহ নেপাল এবং ভুটানের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষজন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সকলে যদি এমপি সাহেবের মতো এলাকার কথা ভাবতো তাহলে দেশটা সত্যি অনেক এগিয়ে যেত এবং জনগনের অনেক উপকার হতো। ইতি মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতুকে ঘিরে বেশ কয়েকটি টিম পরিদর্শনে এসেছিলেন মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে সয়েল টেস্টের জন্য, চলছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা এবং কার্যক্রম চলামান রয়েছে। চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সেতুটি নির্মান হলে চিলমারী হবে একটি আধুনিক শহর, শতশত মানুষের হবে কর্মসংস্থান। সেতুটি নির্মান হলে চিলমারীসহ জেলার সাথে রৌমারী রাজিবপুর বাসীর একটি বন্ধন হবে মন্তব্য করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজর আছে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য। সেতুটি নির্মান হলে এই অঞ্চল যেমন আধুনিকতার ছোয়া পাবে দেখবে সফলতা তেমনি সৃষ্টি হবে কর্মস্থানের। তিনি আরো জানান, সেতু নির্মান ও জমি অধিকরনে কার্যক্রম অতিশীগ্রই শুরু হবে। সুত্র জানান, ব্রহ্মপুত্র সেতুটি চিলমারী উপজেলার ফকিরের হাট থেকে উপজেলার নয়ারহাট হয়ে রৌমারী উপজেলায় গিয়ে মিলিত হবে।