• মার্চ ২৯, ২০২৪ ৪:০৫ অপরাহ্ণ

ঢাকার বাইরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল চালু না হওয়ায় বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে

সেপ্টে ১৩, ২০২০

দেশজুড়েই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে সাইবার অপরাধ। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল চালু না হওয়ায় বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। কারণ মামলা হলেই তাদেরকে ঢাকা আসতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী ও ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা সারাদেশে ট্রাইব্যুনালগুলো দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছে। ভুক্তভোগী ও আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাধারণত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপের ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ব্লগ মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়ে থাকে। বর্তমানে সারা বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা ব্যাপকভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিগত জানুয়ারি মাসেই ৭টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সেগুলোর অবস্থান হবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। ইতিমধ্যে ওসব সাইবার ট্রাইব্যুনালে জনবল নিয়োগে কিছু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই ট্রাইব্যুনালগুলোর কাজ শুরু হলে কাউকে মামলা করার জন্য আর ঢাকায় আসতে হবে না। তাতে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ কমবে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন থানা থেকে দুই হাজার ৬৪২টি মামলা বিচারের জন্য সাইবার ট্রাইব্যুনালে এসেছে। তাছাড়া সরাসরি ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা হয়েছে এক হাজার ৮২টি মামলা। ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনাল এক হাজার ৮২টি মামলার মধ্যে ৪৪৭টি মামলা বিভিন্ন সংস্থাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ৬৩৫টি মামলায় প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় আদালত খারিজ করে দেন। আর তদন্তাধীন ৪৪৭টি মামলার মধ্যে ১৫০টির তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যে আদালতে জমা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা মোট দুই হাজার।
সূত্র আরো জানায়, সাইবার ক্রাইমের মামলাগুলো দায়ের করার সময় তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় না। তাছাড়া অধিকাংশ মামলাই ভিত্তিহীন বা ভুয়া। পূর্বশত্রুতাবশত প্রতিপক্ষকে হেনস্থা করতে ওসব মামলা করা হচ্ছে। আর অদক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা দিয়ে মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। ফলে দুর্বল মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি নজরুল ইসলাম শামীম জানান, বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল বিগত ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১২৪টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৩৫টি মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। আর অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ৮৯টি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছে। তাছাড়া অভিযোগ গঠনের শুনানির দিনে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে ২০০টিরও বেশি মামলার আসামি।
অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের মামলা নিষ্পত্তির জন্য ২০১৩ সালে ঢাকায় একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল হয়। সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ৭টি বিভাগীয় শহরে আরো ৭টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ওসব ট্রাইব্যুনালে এখনো কোনো বিচারক নিয়োগ হয়নি। ফলে একজন ব্যক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করতে হলে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। তাতে বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তিও বাড়ছে। তবে সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোতে শিগগির বিচারক নিয়োগ করা হবে। মূলত করোনা ভাইরাসের কারণে বিচারক নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে। তবে শিগগিরই নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। আইনে আছে এই ট্রাইব্যুনালে একজন জেলা জজ পদমর্যাদাসম্পন্ন বিচারক থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, শিগগিরই সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে।