• নভেম্বর ২১, ২০২৪ ৩:২৪ অপরাহ্ণ

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

বিলুপ্ত হওয়ার পথে বাগমারার হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ী

এপ্রি ১৮, ২০২২

রাজশাহী: রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। যা মূলত বীরকুৎসা জমিদার বাড়ি বা বীরকুৎসা পরগণা নামে পরিচিত। উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ থেকে ১৮ কিলোমিটার দুরত্বে বাগমারা সীমানার শেষ প্রান্তে যোগীপাড়া ইউনিয়নে বীরকুৎসা গ্রাম অবস্থিত।
নাটোর-সান্তাহার রেলপথের পাশে ৫০ বিঘা জমির উপর এই জমিদার বাড়ি অবস্থিত। বাড়িটির এক সময়ে হাজারটি দুয়ার ছিল বলে এর নামকরণ করা হয় হাজার দুয়ারী। নওগাঁ জেলার আমরুল ডিহির রাজা গোপাল ধাম তার মেয়ে প্রভাতী বালাকে ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে দেন এবং তার অধীনস্থ এই বীরকুৎসা পরগণাটি মেয়ে প্রভাতী বালা ও জামাই বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে লিখে দেন। আর এই থেকেই এই জমিদার বাড়িটির জমিদারীর সূচনা হয়।
১৯৪৭ সালে বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার ভারতের হুগলী চন্দনগরে চলে গেলে পরবর্তীকালে এই বাড়িটি সরকারের দখলে চলে আসে। তার ৫জন পুত্র ছিলেন। তারা হলেন- পরিমল, নির্মল, সুনীল, শ্যামল ও অমল। জমিদারের ১টি হাতী ও ৪টি লালবর্ণের ঘোড়া ছিল। হাতীতে চড়ে তিনি জমিদারী দেখাশুনা করতেন। জমিদারের ১৭টি নায়েব খাজনা আদায় ও হিসাব রাখতেন। হাজারদুয়ারী জমিদার বাড়ির দরজাগুলো সেগুন কাঠের তৈরী এবং সুন্দর কারুকাজ করা ছিলো। দরজাগুলো ছিল তিনটি স্তরে সাজানো। প্রথমে কাঠ, তারপর লোহার গ্রিল, এরপরে তা দামি কাঁচে মোড়ানো ছিলো। বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই ভাই দুর্গা বাবু ও রমা বাবু এই প্রাসাদেই থাকতেন। প্রাসাদের সামনে বাহারি ফুলের বাগান ছিল প্রাসাদের পশ্চিম দিকে খিড়কি দরজা পার হয়ে সান বাঁধানো একটি বিরাট পুকুর রয়েছে। এই পুকুরে শুধু জমিদার পরিবারই গোসল করত। প্রাসাদের ভেতরের এক পাশে ছিল জলসা ঘর।
কলকাতা থেকে ভোলানাথ অপেরা এসে গান বাজনা করতো। পূর্ব দিকের দেউড়ির দুই পাশে ছয় জন করে বারো জন বরকন্দাজ থাকত। দেউড়ির পাশে ছিল মালখানা। এর কিছু দূরে ছিল মহাফেজখানা। প্রাসাদের পূর্বের দেউড়ি পার হয়ে সামনে আরেকটি বড় পুকুর আছে। সেখানে গোসল করত আমলা, পেয়াদা ও বরকন্দাজরা। এই পুকুরটি এখন বেদখল হয়ে গেছে। বকুলতলার পাশে খাজনা আদায়ের ঘর ছিল। যা এখন বীরকুৎসা তহসিল অফিস নামে পরিচিত। এর পাশের পূজা মন্ডপটিতে বসানো হয়েছে পোস্ট অফিস। বর্তমানে জমিদার বাড়ির ভৌত কাঠামো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ঐতিহ্যবাহী এই হাজার দুয়ারী জমিদার বাড়ীটি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য এলাকাবাসীর দাবী।