করোনাকালে মানুষের আয় কমে গেছে। নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে অনেক মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাজারের অস্বস্তি। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। মোটা চাল, সবজি, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেড়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের ব্যয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে পণ্য কিনতে। বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নতুন করে শঙ্কিত করছে মানুষকে। উসকে দিচ্ছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের স্মৃতি। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ভারত থেকে আমদানি এবং সরকারের নানা আশ্বাসের পরও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি। জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি এবং সরকারের নানা আশ্বাসের পরও একটু একটু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ ছাড়াও ভোক্তার অস্বস্তি কাটছে না আদা, রসুন, চাল, ডাল, তেল ও চিনির দামে। আগের বাড়তি দামেই স্থির রয়েছে এসব পণ্য। তবে সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে সবজি ক্রেতারা।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে বাজারে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। ফলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই যেকোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। বাজারে হস্তক্ষেপ করার জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নামের একটি সংগঠন থাকলেও তার কোনো প্রভাব প্রত্যক্ষ হচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থাকলেও বাজারে অনৈতিক মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে সচরাচর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বাজারে পণ্যের দাম কেন বাড়ে? সাধারণত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে বাজারে যেকোনো জিনিসের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুক্তবাজারে যখন যেকোনো পণ্য সহজেই আমদানি করা যায় তখন দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে নানা অজুহাতে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের একটি গোপন জোট বা সিন্ডিকেটের কথা বরাবরই আলোচিত হয়। এখন একেক সময় একেকটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণের উপায় কী? বিকল্প বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। টিসিবিকে কী করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়, তা ভাবতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই সক্রিয় হতে হবে।