• বৃহঃ. জুন ২৬, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

মেয়েকে পড়াতে চান রশিদা

এপ্রি ১১, ২০২২

আট বছর পূর্বে স্ট্রোক করে মারা গেছেন স্বামী। রেখে গেছেন শুধু মাথা গোজার ঠাঁই। হাত পেতে আর অন্যের বাড়ীতে কাজ করে কোন রকমে দুই সন্তানের মুখে আহার তুলে দিয়েছেন তিনি। এখন সন্তানেরা বড় হয়ে গেছে। বেড়েছে তাদের খরচ। সেটি মেটাতে হিমসীম খেতে হচ্ছে রশিদা বেগমকে (২৬)। সরকারিভাবে গত বছর থেকে বিধবা ভাতা পাওয়া শুরু হয়েছে তার। তিন মাসে জোটে মাত্র দেড় হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে আর নিজের কায়িক শ্রমে ৯ম শ্রেণি পড়-য়া মেয়ে জান্নাতুন আক্তার (১৫) আর ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি করা ছেলে রশিদুল (১০) এর পিছনে খরচ জোটাতে শরীরটা পাটকাঠি করে তুলেছেন তিনি। তবু স্বপ্ন মেয়ে যেন তার মত সাংসারিক কষ্টে না ভোগে।
রোববার  সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সুভারকুটি মোক্তারের হাট সংলগ্ন গ্রামে গিয়ে কথা হয় রশিদা বেগমের সাথে। শশুরবাড়ীতে ৪ শতক জমিতে পশ্চিমমুখী ঘরটা তার। একই বাড়ীতে শাশুরী জামেনা বেওয়া (৪৬) আর তার বাক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তাদেরও সম্বল বলতে ছাগল পালন আর অন্যের বাড়ীতে কাজ করে টেনে টুনে সংসারের ঘানি টানা। প্রতিবন্ধী ভাতা তাদেরও একমাত্র অবলম্বন। বড় ছেলে মারা গেছে। ছোট ছেলে অভাবের তাড়নায় বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতের দিল্লীতে গেছে ইট ভাটায় কাজ করতে। দেড় বছর ধরে সেই ছেলে আর বাড়ীতে ফিরছে না। এখন বড় বউয়ের মত তিনিও কায়িক শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে কোন রকমভাবে সংসারটি চালাচ্ছেন।
স্থানীয় স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে পড়-য়া জান্নাতুন আক্তার জানায়, আমি শিশু বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। তারপর থেকে মা সংগ্রাম করে আমাদের দুজনকে মানুষ করছে। কখনো খেয়ে কখনো বা না খেয়ে স্কুলে গিয়েছি। এখন পড়াশুনার খুব চাপ। বেশিরভাগ বান্ধবী প্রাইভেট পড়ছে। গাইড কিনে সহায়তা নিচ্ছে। আমি পারছি না তাই পিছিয়ে যাচ্ছি। এদিকে মায়ের মুখের দিকেও তাকাতে পারছি না।
রশিদা বেগমের শাশুরী জামেনা বেওয়া জানান, আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর ১৪বছরের রশিদাকে বিয়ে করে ঘরে তোলে। রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতো। হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেল। এখন বউটা অনেক কষ্টে ছেলেমেয়ে দুটোকে মানুষ করছে। বিধবা ভাতা পায় বলে তার কপালে আর কিছুই জোটে না। এই দিয়ে তিনটে মানুষ কিভাবে চলে। এর মধ্যে রয়েছে নাতনীটার পড়াশুনার খরচ। আমি বলছি মেয়েটারে বিয়ে দাও। কিন্তু সে নাকি বাল্যবিয়ে দিবে না। মেয়েকে শিক্ষিত করবে। এই করতে গিয়ে শরীরটা শেষ করে ফেলল।
জান্নাতুনের মা রশিদা বেগম জানান, অভাবের মধ্যে কষ্ট করে জীবন পার করছি। ইচ্ছে ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করবো। কিন্তু পড়াশুনার অনেক খরচ। মেয়েটাকে প্রাইভেটও দিতে পারছি না। তাই রেজাল্ট আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না। তবে আমি হাল ছাড়িনি। যেভাবে পারছি মেয়েকে পড়ানোর চেষ্টা করছি। আমার মত ওর যেন বাল্যবিয়ে না হয় সে ব্যাপারে আমি শতর্ক রয়েছি। গ্রামে কোন কাজকর্ম না থাকায় এনজিও থেকে একটি গরু পেয়েছি তাই দিয়ে মেয়েটার ভবিষ্যৎ খরচের কথা ভাবছি।
এ ব্যাপারে হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা জানান, আমার ইউনিয়নে এমন অভাবী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা যতটুকু পারছি তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। ওই পরিবারটির সমস্যার কথা জেনে বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সামনে দেখি তাদের জন্য আরো কিছু সহযোগিতা করা যায় কিনা।

বিষয়টি শুনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাসেদুল হাসান জানান, এই প্রথম খবরটি জানলাম। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। প্রশাসন থেকে যতটুকু পারা যায় তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।