মোঃ ইসলাম, ঠাকুরগাঁও:
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই আনন্দ উৎসবকে ঘিরে চারদিকে চলছে নানা আয়োজন।
ঠাকুরগাঁওয়ে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা। প্রতিমা তৈরিতে এঁটেল ও বেলে মাটি ছাড়াও বাঁশ-খড়, দড়ি, লোহা, পাট, কাঠ, রং, বিভিন্ন রঙের ছিট কাপড় ও শাড়ি দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত তারা।
কে কত ভালো প্রতিমা তৈরি করে ভক্তদের হৃদয় ছুঁতে পারেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে। সামর্থ্য অনুযায়ী স্থানীয় ও অন্য জেলা থেকে কারিগর এনে প্রতিমা তৈরি করছেন বিভিন্ন মন্দিরের পূজার আয়োজকরা।
জেলার পৌর শহরের গোবিন্দ জিউ মন্দির, দুর্গাবাড়ি মন্দির, শান্তিনগর মন্দির, কালিবাড়ি মন্দির ও ফারাবাড়ি মন্দিরে দেখা গেছে সেখানে প্রতিমার কাজ প্রায় অধিকাংশই শেষ। রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবি।
দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি গণেশ, কার্তিক, লক্ষী সরস্বতীর প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে হয়। মহিষাসুর, সিংহসহ সবার বাহনও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই সেগুলোকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব। আর এসব মিলিয়েই পরিপূর্ণ হয় একটি দুর্গার প্রতিমা।
মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হতে হচ্ছে দুর্গাপূজা। ঢাকঢোল আর কাঁসর বাদ্যে দেবীর বোধন পূজার মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ বছর দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে দোলায় চেপে মর্তে ধামে আসছে। ৫ দিন নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে মর্তে থেকে কৈলাসে দেবী ফিরবেন ঘটকে।
এদিকে প্রতিমা শিল্পীরা জানিয়েছেন প্রতিবছরই তারা দুর্গার প্রতিমা বানিয়ে থাকেন। এবারও তারা দিনরাত পরিশ্রম করে পরিবারের সকলকে নিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু
মন্ডপগুলোতে ছোট করে প্রতিমা বানাচ্ছেন মন্দির কমিটি। জিনিসপত্র দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে। এতে তাদের এই পরিশ্রমে তেমন কোন লাভবান হতে পারছেন না প্রতিমা শিল্পীরা। তারপরও বংশের ঐতিহ্য কে টিকিয়ে রাখতে তাদের এই পরিশ্রম। ইতিমধ্যেই প্রতিমা বানানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলছে রংয়ের কাজ দৃষ্টিনন্দনরূপে সাজানো হচ্ছে প্রতিমাগুলো।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা সম্মিলিত শারদীয় দূর্গাপূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উপলক্ষে তারা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রতিবছর যেভাবে জেলায় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়। ঠিক একই ভাবে এবারও পূজা উদযাপন করা হবে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়।
এদিকে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন জেলায় এবছর প্রতিটি দুর্গাপূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে আনসার নিয়োগ করা থাকবে। পুলিশের টহল টিম মাঠে থাকবে। সেই সাথে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। অন্যান্য বাহিনীরাও মনিটরিং করবে। তিনি আশা করেন ঠাকুরগাঁওয়ে সকলে মিলে একটি সুন্দর এই উৎসবটি পালন করবেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা সম্মিলিত শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে এবার দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সদর উপজেলায় ২১৭ টি,
হরিপুর উপজেলা ২০ টী, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ৬৩ টি, পীরগঞ্জ উপজেলা ১১৯ টি রাণীশংকৈল উপজেলা ৫৪ টি, জেলায় সব মিলিয়ে ৪৭৩ টি মন্ডপে একযোগে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
আসছে ১৩ই অক্টোবর বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলা শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে টাঙ্গন নদীতে দুর্গার ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এই উৎসবটি।