• মে ৫, ২০২৪ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

শাহ বাজার আবুল হোসেন (এএইচ) ফাজিল মাদ্রাসার
সভাপতির ক্ষমতা পেয়েই ৪০ মণ মাছ চুরি

নভে ১৬, ২০২২

শাহ বাজার আবুল হোসেন (এএইচ) ফাজিল মাদ্রাসার
সভাপতির ক্ষমতা পেয়েই ৪০ মণ মাছ চুরি
কুড়িগ্রাম ব্যুারো:
ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতায় এসে অবৈধ সুবিধা না পেয়ে লিজকৃত বিলের ৪০মন মাছ জোরপূর্বক উত্তোলন, প্রাণনাশের হুমকী এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে লিজ বাতিলের অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসা সভাপতির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী তরুণ যুব উদ্যোক্তা হয়রাণী থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত নিয়েছেন আদালতের আশ্রয়। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শাহ বাজার এএইচ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার স্বত্ব দখলীয় ৩টি মৎস প্রকল্পে।
মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ীর শাহ বাজার এএইচ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার নিজস্ব দখলীয় সম্পদ মরানদী নামীয় শামাবিল-১, শামাবিল-২ ও শামাবিল-৩ মৎস প্রকল্পের ৯দশমিক ৫০ একর জায়গা ১৫ বছরের জন্য লীজ গ্রহন করেন ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ঠাকুরপাঠ এলাকার আতাউর রহমানের পূত্র তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদি হাসান। ২০১৭ সালের প্রবল বন্যায় লীজকৃত বিল তিনটির দুইপাড় স্রোতে ভেসে যায়। মাঝখানে বালু ভরাট হয়ে গেলে মাছ চাষের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পরে। ফলে মাদ্রাসা কমিটি বিল তিনটি ইজারা দিতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে বিল সংস্কার ও মাঝখানে ভরাটকৃত বালু উত্তোলন সাপেক্ষে দীর্ঘ মেয়াদে তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী হাসানকে ১৫বছরের জন্য বিল ৩টি ইজারা প্রদান করা হয়। প্রথম ৫বছরে সংস্কার কাজের জন্য লীজ গ্রহনকারী ১লক্ষ টাকা প্রদানের মাধ্যমে প্রকল্পের মালিকানাভূক্ত হন। যা চুক্তিপত্রের ২নং শর্তে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সাল থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৫১হাজার টাকা ভাড়া র্নিধারণ করে নোটারী পাবলিকে উভয়পক্ষ এফিডেভিটের মাধ্যমে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন বিগত ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে। চুক্তির পর পরই শর্ত মোতাবেক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ধরলা নদী সংলগ্ন বিলের দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় পূণ:খনন, পাড় সংস্কার, পোনা অবমুক্তকরণ, বিভিন্ন প্রকার ফলদ ও বনজ বৃক্ষাদী রোপন,নাইটগার্ড ও শ্রমিক নিয়োগসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদি হাসান।
এরমধ্যে ২০১৯ সালের ৬ মে মো. আবুল কাশেম সরকার মাদ্রাসাটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর ২০২১ সালে মাদ্রাসার গভর্নিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে চলতি বছর নতুন গভর্নিং কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ। সভাপতির ক্ষমতা পেয়েই হারুন অর রশিদ লীজ গ্রহনকারী মেহেদি হাসানের কাছে ৫লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবী করেন। দাবীকৃত টাকা না পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও যোগসাজসের মাধ্যমে এককভাবে ইজারা চুক্তিপত্র বাতিল করে দেন। এরপর চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর নতুনভাবে ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এসময় ইজারা গ্রহনকারীদের কোন প্রকার নোটিশ প্রদান বা আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেয়া হয় নাই। এদিকে বিশাল অর্থ লগ্নি করে নতুন কমিটির কাছে সহযোগিতা না পেয়ে সুবিচারের আশায় আদালতের স্মরণাপন্ন হন তরুন উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান। তিনি অবৈধভাবে নতুন করে লিজ নোটিশ প্রদানের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম বিজ্ঞ জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৫১/২০২২। বিজ্ঞ আদালত সন্তোষজনক জবাবের জন্য সভাপতি ও অধ্যক্ষকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শনোর জন্য নোটিশ প্রদান করেন। এ ঘটনায় ক্ষীপ্ত হয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে আসামীরা সংঘবদ্ধ হয়ে লীজকৃত বিলে দু’দফায় গত ৪ নভেম্বর ও ৫ নভেম্বর দু’দিনে ২০মন করে ৪০মন মাছ জলাশয় থেকে জোড়পূর্বক উত্তোলন করেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। পরে জোড়পূর্বক মাছ চুরির অভিযোগ এনে মেহেদি হাসানের মামা ও প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানকারী মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাদী হয়ে চলতি মাসের ৭তারিখে ফুলবাড়ী বিজ্ঞ আমলি আদালতে দন্ডবিধি ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৭৯/৪২৭৫০৬(২)/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা নং-৪৮/২০২২ইং। মামলায় আসামীরা হলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন অর রশিদ, অধ্যক্ষ আবুল কাশেম সরকার, নজির হোসেন, জালাল উদ্দিন, নৈশ প্রহরী হাবিবুর রহমান, মিলন মিয়া, শ্রী কমলচন্দ্র বিশ^াসসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫জন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কাশেম সরকার জানান, তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে। মাদ্রাসাকে তারা কোন টাকা পয়সা দেয় নাই। তৎকালীন অধ্যক্ষ জানিয়েছেন তিনি কোন টাকা পান নাই। পুকুর সংস্কার আমরাই করেছি। রংপুর বিভাগ মৎস উন্নয়ন প্রকল্প, মৎস অধিদপ্তর থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বিল সংস্কারের কাজ করা হয়।
একই কথা জানালেন শাহ বাজার এএইচ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার গভর্নিং বডি’র সভাপতি ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। তিনি জানান, নথি খুঁজে দেখি মাদ্রাসাকে ১লক্ষ টাকা প্রদান করা হয় নাই। তারা রশিদ দেখাতে না পারায় চুক্তি ভঙ্গের জন্য উকিলের মাধ্যমে দুটি নোটিশ দিয়েছি। তারা ভুল স্বীকার করে নাই। এজন্য চুক্তি বাতিল করে নতুনভাবে ইজারার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে।
তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদি হাসান জানান, অক্লান্ত পরিশ্রম আর এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২৮ লক্ষ টাকা লগ্নি করে পতিত বিলগুলো আমি গত দুই বছর ধরে (২০১৮-১৯) সংস্কার করে মৎস চাষের জন্য উপযুক্ত করি। আমার কাজের পর সরকারি উদ্যোগে মৎস বিভাগ থেকে বিলগুলোতে কতটুকু কাজ হয়েছে তা স্থানীয়রা ভাল বলতে পারবেন। উভয়পক্ষ এফিডেভিট করে নগদ এক লক্ষ টাকা দিয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করি। টাকা দিয়েছি বলেই গত ৫বছর ধরে বিল সংস্কার ও মৎস চাষ করে আসছি। এখন নতুন কমিটি অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে নানান কথা বলছে। তারা আমার দিকটা দেখছে না। বাদী পক্ষ আমার আইনগত অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে। আমি অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হয়েছি। তারা মাইকিং করে পুকুরের সব মাছ তুলে নিয়ে গেছে। এখন চুক্তি বাতিল করলে সর্বশান্ত হয়ে যাবো। সুবিচার পেতে আইনের দাড়স্থ হয়েছি।