• মঙ্গল. জুন ২৪, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

স্বপ্ন ভেঙ্গে চিলমারীতে অশ্রু ঝরছে শতশত পরিবারের

আগ ৯, ২০২২

সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী:
স্বপ্ন গেল ভেঙ্গে ছাড়তে হলো শেষ আশ্রয়স্থল। চোখের জলে ভাসছে বাঁধের পাড়। এক সময় থাকার ঘর ছিল। ছিল গোয়াল ও গরু। ফসল ফলানোর জমিও ছিল। সেই জমিতে চাষ হতো নানা ধরনের ফসল। গাইয়ের দুধ, বোরো ধানের ভাত, নদীর টাটকা মাছ সবই ছিল। সময়ের নির্মম পরিহাসে এসব এখন তাদের কাছে শুধুই স্মৃতি। নদী ভাঙনে সব করেছে নিঃস্ব। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে হলে এখন তাদের চোখে পানি ঝরে। অতীতের হাজারো সুখময় দৃশ্য ঝাপসা হয়ে ভেসে ওঠে চোখের পর্দায়। নদী পাড়ের মানুষরা বেশির ভাগেই দরিদ্র। নদীর সঙ্গে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় তাদের। রাষ্ট্রও অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও পরিবেশগত কারণে তাদের শতভাগ সুবিধা দিতে পারে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, রাস্তাঘাট কোনটির সেবাই নদী পাড়ের মানুষগুলো পায় না। এমন কি এক জায়গায় ঘর তুলে বছরের পর বছরও অবস্থান করতে পারে না। নদী এসে বাদ সাধে। ভেঙে দেয় ঘর-সংসার। কেড়ে নেয় স্বপ্নের সব রঙ। তার পরও তারা নদীর কাছেই থেকে যান। নদী তাদের সঙ্গে শত্রুতা করলেও জীবনের অংশ হিসেবে চরবাসী নদীকে অনেক আপন করে নিয়েছেন। এখানকার নদী আর নারী একই সুতোয় গাঁথা। মিনারা, মোকলেরানীসহ অনেকের বয়স ষাটের কোঠা পেরিয়েছে। কারো হয়তো আরো বেশি। নদীতে এদের বসতভিটা অনেক আগেই বিলীন হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙ্গনে বাড়িঘর হারিয়ে ২০ থেকে ৩০ বছর আগে এরা বাসা বেঁধে ছিল বাঁধে। উপায় না পেয়ে বাঁধেই বেঁধেছিলেন বাসা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ছিল যেন তাদের স্বপ্নের সংসার। সেই সংসার ভেঙ্গে গেল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশে আর এক্সকাভেটরের আঘাতে।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ফকিরেরহাট থেকে শুরু করে রমনার পাত্রখাতা পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ছোট ছোট ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছিল কয়েক হাজার পরিবার। বৃষ্টিতে এসব ঘরের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। আবার রোদের সময় সূর্যের তাপে অত্যধিক গরম হয় ছাপড়া (একচালা) ঘরগুলো। শিশুদের নিয়ে এখানকার বাসিন্দরা অনেক কষ্টেই দিন কাটতেন। এখানে বসবাসকারী পরিবারের প্রধানদের অধিকাংশই দিনমজুর। তারা অন্যের জমিতে কাজ করে উপার্জন করে সংসার চালান। উৎছেদ অভিযানে শেষ আশ্রয় টুকু ছাড়তে হচ্ছে তাদের। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজন নিরুপায় হয়ে স্থান ছাড়তে শুরু করলেও অনেকে বাঁধেই খোলা আকাশের নিচে দিন পাড় করছে। বাঁধের বাসিন্দা মিন্টু জানান, ভাঙ্গনে সব কিছু হারিয়ে পূর্ব পুরুষর বাধ্য হয়ে তারা বাঁধের উপরে ঘর বেঁধেছিল। প্রায় ৩০/৪০ বছর থেকে এখানে আমাদের বাস, কাজ করলে ভাত জোটে না করলে জোটে না, একটি ঘরের করতে পারিনা আবার জমি কিনবো কেমনে তাই বাঁধেই রয়েছি আকাশের নিচে। কান্না জনিত কন্ঠে মোকলেরানী বলেন, এহন তো মেশিন ভাঙ্গি দিল কই যামু চলমু কেমন রে বাবা। বাঁধ সংস্কার ও উৎছেদ অভিযানে শুধু মিন্টু, মোকলেরানী নয় শতশত পরিবার আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। বসবাস তাদের খোলা আকাশের নিচে। বাঁেধ আশ্রিতরা বলেন, সরকার ঘর দিচ্ছে জায়গা দিচ্ছে তাহলে আমাদের কেন খবর নিচ্ছেনা, আমরা কি এদেশের জনগন নই। তারা আরো বলেন, আমাদের তো স্থান বলতে বাঁেধই ছিল ঘরবাড়ি এখন তো সেটিও ভেঙ্গে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমরা এখন কই যাবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা জায়গা দেখতেছি, তা পেলে তাদের জায়গাসহ ঘর করে দেয়া হবে।