• মঙ্গল. মে ১৩, ২০২৫

Sakaler Kagoj

The Most Popular News Portal

শাক-সবজির সঙ্গে চালের দামও বাড়তি

সেপ্টে ১৩, ২০২০

বন্যার ধাক্কায় দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের শাক-সবজি; এর সঙ্গে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর দামও কিছুটা বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ মন্তব্য করে মিরপুর বড়বাগে বাজার করতে আসা মহসিনুল কবির নামের একজন বললেন, “এখন মহামারীর সময়ে মানুষের হাতে টাকা পয়সা নেই; বাজারেও কেনাকাটার চাহিদা কম। তবুও প্রত্যেকটা জিনিসের দাম প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে।
“আমার মনে হয়, মহামারী পরিস্থিতি না থাকলে দাম আরও বাড়ত। এখন কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না।”
শুক্রবার মিরপুর, পীরেরবাগ, কারওয়ানবাজারসহ এসব এলাকার কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে দেখা যায় কেবল মাছ ছাড়া সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামই বাড়তির দিকে। বাজারে নতুন মওসুমের সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি পাওয়া যাচ্ছে। ছোট আকারের একটি কপি ৬০ টাকা আর প্রতি কেজি সিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে পুঁইশাক ২০ টাকার বেশি বিক্রি হত না, তার দাম এখন ৪০ টাকা বা তার বেশি। ৫-১০ টাকার লাল শাকের আঁটি এখন ১৫-২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বড়বাগ কাঁচাবাজারে বিগত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, কাকরোল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকানে ভরপুর সবজির মজুদ দেখে মনে হতে পারে বাজারে হয়ত প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিটি সবজিই বেশ চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে আড়ত থেকে। সে কারণেই দাম বাড়তি। দাম বেড়ে গেলে আমাদেরও লাভ কম থাকে, বেচাকেনাও কমে যায়।”
শাক-সবজির চড়া দামের মধ্যে চালের দামও বাড়তির দিকে জানিয়ে কারওয়ানবাজারের মদীনা রাইস এজেন্সির সিদ্দিকুর রহমান মিন্টু বলেন, “গত দুই মাস ধরেই চালের দাম বাড়তি। এখন মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা ২৬০০ টাকা থেকে ২৬৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৬০০ টাকা, বিআর আটাশ ২২০০ টাকা এবং গুটি স্বর্ণা ২১০০ টাকায় প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে।”
এদিকে ভারতে বন্যার কথা বলে গত দুই সপ্তাহ ধরেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। মাঝখানে দুই দিনের জন্য দাম কমলেও এখন আবারও প্রতিকেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আলু। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে আদার দামও কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা থেকে আড়াইশ টাকায়।
বড়বাগের মুদি দোকানি মিলন মিয়া বলেন, “বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়াই যাচ্ছে না। দেশি পেঁয়াজের দামও ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম যে কেন বাড়ছে তা আমারও বুঝে আসছে না। বলতে গেলে প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়তি।
কারওয়ানবাজারে আলুর পাইকারি বিক্রেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, “এবার মহামারীর সময় অনেকে ত্রাণ হিসাবে আলু বিতরণ করেছেন। এর মধ্যে নেপালেও কিছু আলু রপ্তানি হয়েছে বলে শুনেছি। সব মিলিয়ে কোল্ড স্টোরেজে আলুর শর্টেজ আছে। সে কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন আলুর দাম বেশি।”
কারওয়ানবাজারে পাইকারিতে বিক্রমপুরের আলু প্রতি কেজি ৩১ টাকা এবং রাজশাহীর আলু ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও আলুর দাম ২৫ টাকা থেকে ২৬ টাকার মধ্যে ছিল বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। এই বাজারে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৪ টাকা দরে আর দেশি ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ কোনো দোকানেই দেখা যায়নি।
মসলার মধ্যে কেবল রসুনের দাম কিছুটা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে শহীদুল বলেন, প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় দেশি ও চীনা রসুন পাওয়া যাচ্ছে। তবে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া আদা এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২০০ টাকা থেকে আড়াইশ টাকায়।
আদার আমদানি কমে যাওয়ায় আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়েছেন বলে দাবি শহীদুলের।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির এই সময়ে মাছ-মাংসের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় উঠেছে। এই সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৪০০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৫৬০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে তুলনামূলক সহনশীল রয়েছে মাছের দাম। ঝাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় আর এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ১৪০ টাকা, চাষের কই ১৩০ টাকা, রুই ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাওর ও মিঠাপানির কিছু কিছু ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৪০ টাকা থেকে দেড়শ টাকায়।