• এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে কঠোর নজরদারিতে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানাগুলো

এপ্রি ২৪, ২০২২

ঈদের আগে শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকার বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানাগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেটে মোট শিল্প কারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ১৭৭টি। তার মধ্যে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সদস্য কারখানার সংখ্যাই ১ হাজার ৬১৭ আর নিট পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ৬৮৫টি। বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য কারখানা ৩৩৮টি। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত কারখানা ৩৪৮টি। পাটকল ৮৩টি। তাছাড়া চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধপণ্যসহ অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ১০৬টি কারখানা আছে। বেতন-ভাতা নিয়ে বরাবরই দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকার কারখানাগুলোয় ঈদের আগে অস্থিরতা বিরাজ করে। সম্প্রতি সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের আগেই শ্রমিকদের চলতি এপ্রিলের ১৫ দিনের বেতনসহ ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু শিল্প অধ্যুষিত এলাকার ৮৩৩টি কারখানা  এখনো মার্চের বেতনই পরিশোধ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে ওই কারখানাগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। শিল্প পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আশুলিয়া এলাকায় সব খাত মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৫২২টি কারখানা আছে। তার মধ্যে ৩৯৫টি কারখানা এখনা শ্রমিকদের মার্চের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য কারখানা ৩৩টি, বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ৯টি এবং বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৪টি। তবে আশুলিয়া এলাকায় বেপজার আওতাভুক্ত মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানা নেই। তাছাড়া অন্যান্য খাতে মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ৩৪৯টি। গাজীপুর এলাকায় সব খাত মিলিয়ে মোট ২ হাজার ২২০টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৬১টি, বিকেএমইএর এমন কারখানার সংখ্যা ৯টি, বিটিএমএর সদস্য বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানা ৪টি। তাছাড়া অন্যান্য খাতের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানা ১৭০টি। সব মিলিয়ে গাজীপুরে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ২৫২টি।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সব খাত মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৪৭০টি কারখানা আছে। এর মধ্যে মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১৪টি, বিকেএমইএর কারখানার সংখ্যা একটি আর বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ২টি। বেপজার আওতাভুক্ত বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা এক। তাছাড়া অন্যান্য খাতে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ২৬টি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ৪৪টি। নারায়ণগঞ্জে সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা ২ হাজার ২০৭টি আছে। তার মধ্যে মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৬টি, বিকেএমইএর কারখানার সংখ্যা ২৫টি আর বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৯টি। বেপজার আওতাভুক্ত বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ২টি। তাছাড়া অন্যান্য খাতে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ২৫টি। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ৬৭টি। তাছাড়া ময়মনসিংহে সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে ২৩২টি। তার মধ্যে মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৬টি। বিকেএমইএর কারখানার সংখ্যা এক, বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১১টি। তাছাড়া বেতন-ভাতা অপরিশোধিত পাটকলের সংখ্যা ২টি এবং অন্যান্য খাতে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ৪৯টি। সব মিলিয়ে ময়মনসিংহে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানার সংখ্যা ৬৯টি। খুলনায় সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে ৭৮৬টি। তার মধ্যে শুধু অন্যান্য খাতে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানা রয়েছের ৫টি। ওই হিসেবে খুলনায় মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত মোট কারখানার সংখ্যা ৫টি। আর সিলেট এলাকায় সব খাত মিলিয়ে মোট ৭৪০টি কারখানা আছে। তার মধ্যে মার্চের বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানা মাত্র একটি।
এদিকে শিল্প পুলিশের আওতায় থাকা বড় একটি অংশই পোশাক খাতে কারখানাগুলো। ওই খাতের বেতন-ভাতা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম মান্নান কচি জানান, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্থপ্রবাহ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আশা করা যায় তার প্রভাব শ্রমিকদের ওপর পড়বে না। বেতন-ভাতা পরিশোধের সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে বেতন-ভাতা অপরিশোধিত কারখানাগুলো প্রসঙ্গে শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আশা করা যায় কোনো ধরনের বড় সমস্যা ছাড়াই শ্রমিকরা ঈদ উদযাপন করতে পারবে। মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি এমন কিছু কারখানা আছে। তবে কোনো কারখানায় সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সহায়তা নিয়ে সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন ধরনের কারখানাগুলোকে শিল্প পুলিশ কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।