• এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ২:৫৮ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামে জমি দখলে নিতে সৎ ভাইকে এসিড জাতীয় দ্রব্য নিক্ষেপ ও হত্যাচেষ্টা

আগ ১৬, ২০২১

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
৮ শতাংশ জমি দখল করতে সৎভাই-ভাতিজা মিলে অপর সৎভাইকে হত্যাচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে এসিড জাতীয় দ্রব্য নিক্ষেপ করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যু ভয়ে ও শরীরে পোড়া যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার ধারিয়ারপাড় মোল্লাপাড়া গ্রামে।
ঘটনার বিররণে জানা যায়, এসিড জাতীয় দ্রব্য আক্রান্ত ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম (৫০)। সীমান্তবর্তী কচাকাটা থানার বল্লভের খাস ইউনিয়নের ধারিয়ারপাড় মোল্লাপাড়া গ্রামের একজন রিকশাচালক। তার পিতা ফজলার রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনি বড়। এলাকায় ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন জাহাঙ্গীর। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া জমি মা বালিজন বেগম বসতভিটা ও আবাদী মিলে ৮ শতক জমি জাহাঙ্গীরকে লিখে দেন। মায়ের মৃত্যুর পরও সে ভিটামাটি জাহাঙ্গীর ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু সৎভাইরা ও তাদের সন্তানরা মিলে নানা কায়দায় উচ্ছেদের জন্য বিভিন্নভাবে জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারকে হেনস্তা করে আসছেন।
ঘটনার দিন ১২আগস্ট বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটার দিকে সৎভাই মৃত আবুল হোসেনের ২ পুত্র ক্দ্দুুস (৫০) ও রবিউল (৩৫) এবং অপরাপর সৎভাই আঃ সামাদ (৬০) এবং চাচাতো ভাই সাইফুর (৫০) টিনের বেড়া কেটে জাহাঙ্গীরের ঘরে প্রবেশ করে। ঘুমন্ত জাহাঙ্গীরকে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলে। জাহাঙ্গীর রাজি না হওয়ায় তারা গলাটিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা জাহাঙ্গীরকে এসিড জাতীয় পদার্থ খাওয়ানোরও চেষ্টা করে। কিন্তু জাহাঙ্গীর কোনরকমে তাদের ছাড়া পেলেও তাদের নিক্ষেপ করা এসিডজাতীয় দ্রব্যে তার মুখ, বুক ও পিঠের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। তার চিৎকারে প্রতিবেশী ময়নাল, সোহেল ও ওহাব তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। এসময় তার সৎভাই আঃ সামাদ এবং সাইফুর আবারও হামলা করার চেষ্টা করে। সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী মকবুল এর বাড়িতে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা পিছু হটে। সেখান থেকে স্ত্রী, শ্বশুড় ও জামাতার সাথে যোগাযোগ হলে তারা জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে ওই রাতে ১.৩০টায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সে সময় কচাকাটা থানাকে অবহিত করলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে জাহাঙ্গীরের জবানবন্দী নেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিন শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালে মারপিটে আঘাতপ্রাপ্ত ও পোড়া ক্ষত অবস্থায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীর জানান, ঘটনার দিন পনের আগে ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়ে তার ঘরের স্টিলের আলমারি ভেঙ্গে মূল্যবান জিনিসপত্র, দুই মেয়ের স্বর্ণালঙ্কার ও জমির দলিলপত্র চুরি করে সৎভাই-ভাতিজারা। বৃহস্পতিবার রাতে বেড়া কেটে ঘরে ঢুকে জমি দখলের জন্য ফাকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে আমাকে চাপ দেয় ভাতিজা ও ভাইরা। উল্লেখ্য আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে গত ২মাস আগে ঠুনকো বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীকে বেদম প্রহার করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল একই ব্যক্তিরা। সে ঘটনায় একটি মামলা হয়। সে মামলায় জামিনে রয়েছে হামলাকারীরা। তারা সব সময় আমিসহ আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। আমি সকলের কাছে এর সুবিচার চাচ্ছি।
জাহাঙ্গীরের চিকিৎসা বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নাছের মজুমদার বলেন, জাহাঙ্গীর শরীরে কেমিক্যাল বার্ন নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিল। রেফার্ড পেশেন্ট হিসেবে এখানে এসেছেন। তবে কী কেমিক্যাল দিয়ে বার্ন হয়েছে তা ফরেনসিক পরীক্ষা করলে জানা যাবে। তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে কচাকাটা থানার অফিসার ইন চার্জ কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত হয়েছি। ভিকটিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।