• মে ২০, ২০২৪ ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

চিলমারীতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে চরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা

সেপ্টে ১৪, ২০২২

সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী:
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সেই মেরুদন্ড দিন দিন বাঁকা হয়ে ভেঙ্গে পাড়ার পথে চরাঞ্চলের শিক্ষা। শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়েছে শতশত শিশু শিক্ষার্থী। হতাশায় অভিভাবক। শিক্ষক, স্কুল সঙ্কট, অসচেতনতা, অভাব-অনটন, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেড়ুতেই ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষকদের অবহেলা। প্রাথমিকের গন্ডির মধ্যেই যেন সীমাবন্ধ তাদের শিক্ষা জীবন। আবার অনেকে প্রাথমিক পাড় করলেও মাধ্যমিকের পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ সমস্যা সমাধান আলোচনার মধ্যে থাকছে সীমাবন্ধ মন্তব্য সচেতন মহলের।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম চিলমারী নদী ভাঙ্গন কবলিত উপজেলা। ইতি মধ্যে উপজেলা তিনটি ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে খন্ড খন্ড চরে বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উপজেলা ৬টি ইউনিয়নে ৯৩টি প্রাথমিক ও ১টি শিশু কল্যান বিদ্যালয় থাকলেও নদী ভাঙ্গন ও বিভিন্ন জটিলতার কারনে বিশাল জনগোষ্টি নিয়ে গঠিত নয়ারহাট, চিলমারী ও অষ্টমীর চরসহ তিনটি ইউনিয়নে ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক ও ১টি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। হাজারো শিক্ষার্থী থাকলেও বিদ্যালয় সংকট, যাতায়াত ব্যবস্থার করুন দশা, রয়েছে শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের অবহেলায় পাঠদান ব্যহত হচ্ছে ফলে প্রতি বছর শতশত শিক্ষার্থী বঞ্চিত থাকে শিক্ষার আলো থেকে। এছাড়াও অভাব অনটনের সাথে অভিভাবদের অসচেতনার ও শিক্ষকদের সঠিক সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় প্রতিনিয়ত ঝড়ে পড়ছে শতশত শিক্ষার্থী এবং দিন দিন উপস্থিতি হার কমতে শুরু করেছে। পারিবারের সচ্ছলতার স্বার্থে কোমলমতি শিশুরা বই-খাতা ফেলে দিয়ে বেছে নিচ্ছে নানা কায়িক পরিশ্রম। ফলে বাড়ছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। সরেজমিন চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ থেকে ৫ ম শ্রেনী পর্যন্ত ১২৬ জন শিক্ষার্থী কাগজ কলমে থাকলেও সমবার সকাল ১১টায় থেকে ১২ টা পর্যন্ত ১০জন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়। কথা হলে ৫ম শেনীর শিক্ষার্থী ইতি ও সুরভী বলেন, ৮ থেকে ১০ জন করে উপস্থিত হয় মাঝে মাঝে ২/৪ জন হয়। তবে বিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী খাতা কলমে ৫ম শ্রেনীতে ২৭জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। একই অবস্থা চর শাখহাতি ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। খাতা কলমে ১৭০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে উপস্থিতি দেখা মেলে ১০জন।
উপস্থিতির হার কমেছে স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মোছাঃ লায়লা আর্জুমা বানু বলেন, করোনার বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা মুখি হয়েছে এবং বিস্কুট না থাকার আরো উপস্থিতি কমে গেছে। শুধু চিলমারী ১নং ও চর শাখাহাতি ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় চরাঞ্চলে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২/৩ টি ব্যাথিত বাকি সকল বিদ্যালয়ের অবস্থা প্রায় একই মতো। খাতা কলমে শিক্ষার্থীহার ভরা থাকলেও বাস্তব চিত্র একটু ভিন্ন।
কথা হলে চরাঞ্চলের অবিভাবকরা বলেন, হামরা কিতা কমো, হামার কতার কি কোন দাম আছে নি, সরকার হাজার হাজার ট্যাকা দেয় স্কুলে পড়বার জন্যে, আর স্যারেরা আসতে আসতে বেলা প্রায় ১১টা আর চলে যায় যোহরের আজান দিলে। তারা আরো বলেন, আবার ওমরা (স্যাররা) পালাক্রমে স্কুল আইসে তাহলে পড়াশুনা কি হয় এর চাইতে কামলা দিলে পয়সা আইসে। আবার অনেকে বলেন, সরকারী স্কুলের চাইতে মাদ্রাসায় পড়াশুনা ভালো হয় এই জন্য পোলাপানকে মাদ্রাসায় দিছি।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে ২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে এবং ৩৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
চরাঞ্চলের শিক্ষার মান কিছুটা নাজুক মন্তব্য করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকার বলেন, আমি সরেজমিন ৭৪% শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পেয়েছি তবে আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষারমান পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলের শিক্ষকদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য বিশেষ নৌকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা চলছে আমরা আশা করছি চরাঞ্চলের কোন শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না।