• মে ২, ২০২৪ ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশে ট্রেন যোগাযোগে আড়াই লাখ কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে সরকার

সেপ্টে ২১, ২০২০

বর্তমান সরকার পুরো দেশকেই রেল নেটওয়ার্কে আনার টার্গেট নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে দেশব্যাপী রেল নেটওয়ার্কে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মহাযজ্ঞ রেল আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত হতে চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল নেটওয়ার্কটি হচ্ছে দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। তাছাড়া বিদেশী ঋণ ছাড়াই পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ দেয়ার মতো অবিস্মরণীয় বড় বড় মেগাপ্রকল্প চলমান রেখেই সরকার ২০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সারাদেশে ট্রেন যোগাযোগে আড়াই লাখ কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ চলছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী ওসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন, অগ্রগতি ইত্যাদি নিয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। সরকারের ওসব পদক্ষেপ কার্যকর হলে কয়েকটি স্থান ছাড়া প্রায় সারাদেশই রেল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলের উন্নয়নে চার ধাপে প্রতিটি ৫ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। মোট ২৩৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই মাস্টারপ¬্যান বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে রেল মন্ত্রণালয়। তাতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। বিগত ২০১০ সাল থেকে রেলের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদি ওসব প্রকল্প বাস্তায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ, সারাদেশে ডুয়েলগেজ রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ, বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল লাইন স্থাপন, যমুনা নদীর ওপর বাহাদুরাবাদ-ফুলছড়ি এলাকায় আরেকটি রেল সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে।
সূত্র জানায়, রেলের ২০ বছরের মহাপরিকল্পনায় ২০২২ সালে ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে। তাতে বিস্তৃতি পাবে দেশের পর্যটন শিল্প। আড়াই লাখ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে গত ১০ বছরে অর্ধেকেরও বেশি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। ব্রডগেজের জন্য ভারতীয় ১০টি ইঞ্জিন এসেছে। তাছাড়া চলতি মাসের প্রথমদিকে কোরিয়ান ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন চট্টগ্রামের ডিজেল শপে পৌঁছেছে। আর বিগত ২০১৮ সালে ৫০টি ব্রডগেজ ও ১০০টি মিটারগেজ কোচ ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে আরো ২০০ যাত্রীবাহী কোচ ক্রয় করে পাহাড়তলীর ক্যারেজ ও ওয়াগন মেরামত কারখানায় রাখা হয়েছে। সেগুলোর কমিশনিং ও লোডিং ট্রায়াল শেষ করে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিগত ২০১১-২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৮ বছরে ৩৩০ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ১ হাজার ১৩৫ দশমিক ২৩ কিলোমিটার রেললাইনের পুনর্নিমাণ করা হয়েছে। ১৭৭টি রেল স্টেশনের রিমডেলিং করা হয়েছে। ৬৪৪টি রেল সেতু পুনর্নিমাণ করা হয়েছে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ক্রয় করা হয়েছে মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ ৩৫০টি যাত্রীবাহী কোচ। ভারত থেকে ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন কেনা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য ১১৭টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। তাছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকে যাত্রীবাহী কোচ ও ওয়াগন উদ্ধার করতে দুটি ‘এ’ ক্লাস রিলিফ ট্রেনও ক্রয় করা হয়েছে। নতুন করে ৯১টি স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। স্টিল স্ট্রাকচারের ২য় ভৈরব ও ২য় তিতাস সেতুসহ ২৯৫টি নতুন রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে হাইস্পীড ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে শতভাগ পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে রেললাইন স্থাপন বা নির্মাণ কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা থাকলেও ওই রেলপথকে সংস্কারের মাধ্যমে চলনক্ষম করা হয়েছে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। ২০২২ সাল নাগাদ ওই লাইনে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকসহ ওই এলাকার যাত্রীরা কক্সবাজার যেতে পারবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্পের কাজও হাতে নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। খুলনা থেকে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ চলছে। তাছাড়া যমুনা নদীর ওপর পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মিত হবে। ওই সেতুতে ডুয়েলগেজ ডাবল লেন রেললাইন স্থাপন করা হবে। আর ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ফোরলেন রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। তাছাড়াও সারাদেশে প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার বিদ্যমান রেলপথের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে সার্কুলার রেলপথ কাম-রোড সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সরকারের পাতাল রেলপথ নির্মাণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়াও এই মেগা প্রকল্পে আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশানে পাতাল রেলপথ নির্মাণেরও প্রকল্প রয়েছে।
এদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে ইলেকট্রিক ট্রাকশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে পরিকল্পনা রয়েছে রেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসার। সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর বিগত ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে তারাকান্দি পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মিত হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। খুলনা থেকে মংলা পোর্ট পর্যন্ত প্রায় ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
অন্যদিকে কাশিয়ানী থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ চলছে। বিএনপি- জামায়াত সরকার আমলে বন্ধ হওয়া কালুখালী থেকে ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন এলাকার জনগণের সুবিধার্থে পুনরায় চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের জনগণের যাতায়াত সুবিধার্থে পাঁচুরিয়া থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ২৫ মিলোমিটার রেললাইন পুনরায় চালু করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরাসরি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যেতে দোহাজারী থেকে ১০০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিগত ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে গত ১০ বছরে যুক্ত হয়েছে ৪৬টি রেল ইঞ্জিন বা লোকমোটিভ। চায়না থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন এনে যুক্ত হলেও কয়েক সেট ট্রেন পরিচালনাগত দুর্বলতার কারণে লোকো কারখানায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নাজিরহাট, দোহাজারী, কুমিল্লা ও ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও যাত্রী পরিবহন চালু রয়েছে। দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল পরিবহনে ১৬৫টি মিটারগেজ ট্যাঙ্ক ওয়াগন ক্রয় করা হয়েছে। তাছাড়াও এ সরকারের আমলে ৮১টি ব্রডগেজ ট্যাং ওয়াগন যুক্ত হয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে পণ্য পরিবহনে সংযুক্ত হয়েছে ২২০টি মিটারগেজ ফ্ল্যাট। কেনা হয়েছে ৩০টি ব্রেজভ্যান। দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা থেকে কোচ বা ওয়াগন উদ্ধারে কেনা হয়েছে ‘এ’ ক্লাস একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ রিলিফ ট্রেন। পাশাপাশি কম্পিউটার বেইজড সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করতে এ সরকার আমলে ৬৬টি স্টেশন পরিচালনায় ও কন্ট্রোল সিস্টেম আধুনিকীকরণে কম্পিউটার বেইজড সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আরো ৩৪টি স্টেশনে নতুনভাবে এই সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।