• মে ১, ২০২৪ ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

নানা অনিয়মের কারণে টিসিবির বিপুলসংখ্যক ডিলারশিপ বাতিল

সেপ্টে ২০, ২০২০

নিত্যপণ্য মূল্যে নিম্ন আয়ের মানুষকে অনেকটা স্বস্তিতে রাখতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সব সময় বাজারমূল্যের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে পণ্য বিক্রি করে। বিভিন্ন কারণে বাজারে যখন তেল, চিনি, ডালের চাহিদা ও দাম বাড়ে, তখন টিসিবি তালিকাভুক্ত ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করে। সরকার সাধারণ মানুষের জন্য ওসব পণ্যে ভর্তুকি দিয়ে বাজারে ছাড়ে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ডিলার বাজারের অধিক চাহিদার সুযোগে টিসিবির পণ্য নির্ধারিত স্থানে বিক্রি না করে বাড়তি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। তাছাড়া অনেক ডিলার সময় মতো উত্তোলন করে না, পণ্য বিক্রিতেও অনিয়ম ও কারচুপি করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি ডিলারশিপ নিয়োগ ও বাতিলের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। টিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নানা অনিয়ম এবং সময় মতো পণ্য উত্তোলন না করায় টিসিবি গত তিন মাসে ৭০০টি প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ বাতিল এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করেছে। তার মধ্যে পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম, কারচুপি ও কালোবাজারে বিক্রির দায়ে প্রায় ১০০ জনের ডিলারশিপ বাতিল হয়েছে। এর আগে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো বেশিসংখ্যক ডিলার আর কখনো বাতিল করা হয়নি। টিসিবির ডিলার নিয়োগ গাইডলাইনে ডিলারশিপ বাতিলের ১৬টি কারণ বলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি শর্তটি হচ্ছে- বরাদ্দকৃত পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম, ওজন বা মূল্যে কারচুপি করলে অথবা পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করলে ডিলারশিপ বাতিল এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। তারপরও প্রায়ই ওজনে কম দেয়া এবং পণ্য কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি হাতেনাতে ধরাও পড়ছে অনিয়ম।
সূত্র জানায়, এক সময় টিসিবি ডিলারদের বছরে মাত্র একবার রমজান মাসে পণ্য দেয়া হতো। তাও খুব ব্যাপকভাবে নয়। কমিশনও কিছুটা কম ছিল। তখন নিয়ম-কানুনেও অনেকটা ছাড় দেয়া হতো। ফলে অনেক ডিলারই অবহেলা করে দীর্ঘদিন পণ্য উত্তোলন করতো না। অনেকে দুই বছর পণ্য না তুলেও ডিলার হিসেবে থেকে যেতো। জামানতের পরিমাণ কম থাকায় ডিলারদের পণ্য উত্তোলন ও বিক্রিতে একটা গাছাড়া ভাব ছিল। অনিয়মও ছিল বেশি। কিন্তু এখন অনেক কিছুই বদলে গেছে। নানা প্রয়োজনে, বিভিন্ন উপলক্ষে ডিলারদের মাধ্যমে বছরে তিন থেকে চারবার পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দুই ঈদ ছাড়াও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। বলতে গেলে এখন প্রায় সারা বছরই টিসিবির পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডিলারদের মুনাফার হারও বাড়ানো হয়েছে। তাই নিয়ম-নীতিতেও কঠোরতা আনা হয়েছে। ফলে অনিয়মের কারণে ডিলারশিপও বেশি বাতিল হচ্ছে। টিসিবির তথ্যানুসারে গত মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত নানা কারণে কুমিল্লায় ২২ জন, ময়ময়নসিংহে ১৪ জন, বগুড়ায় ৪ জন ঝিনাইদহে ৭ জন এবং খুলনায় ৩ জনের ডিলারশিপ বাতিল হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়. রমজানে আগে টিসিবির সর্বোচ্চ ট্রাক থাকতো ১৮০টি। কার্যক্রম চলতো ২০ থেকে ২৫ দিন। এখন তা অনেক বেড়েছে। সর্বশেষ গত বছর রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়েছে ৩৮ দিন। দেশব্যাপী ট্রাকের সংখ্যা ছিল ৫২০টি। সেক্ষেত্রে পণ্য বিক্রির আওতাও বেড়েছে। এখন জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলায়ও টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়। অথচ একসময় তা শুধু বিভাগীয় শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে ডিলারদের সুযোগও বেড়েছে। বছর তিনেক আগেও ডিলাররা প্রতি কেজিতে দূরত্ব অনুসারে দোকানভাড়া পেতেন ৩ থেকে ৫ টাকা। এখন পাচ্ছে ৪ থেকে ৬ টাকা। আর কমিশন ছিল প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা। এখন পাচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকা। তবে নতুন গাইডলাইন অনুসারে ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে জামানতের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর দুই বছরের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। শর্তানুসারে পর পর তিন কিস্তি পণ্য তুলতে ব্যর্থ হলে ডিলারশিপ বাতিল করা হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, জামানতের টাকা কম থাকলে ডিলারদের মধ্যে পণ্য উত্তোলনে এক ধরনের অবহেলা তৈরি হয়। তাছাড়া পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম বেড়ে যায়। গত কয়েক মাসে যে পরিমাণ ডিলারের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে তা বিগত বছরগুলোতে হয়নি। আবার প্রয়োজনের তাগিদে নিয়োগও দেয়া হয়েছে প্রায় সমপরিমাণ ডিলার। গত তিন মাসে ৭৫০ জন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে টিসিবি।