• মে ৩, ২০২৪ ৩:৪৪ অপরাহ্ণ

ওষুধ রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

সেপ্টে ১৭, ২০২০

বাংলাদেশের ওষুধের গুণগত মান ও কার্যকারিতার কারণে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশীয় ৪৬ কোম্পানির ৩০০ ধরনের ওষুধপণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়। এমন অবস্থায় শুধু ওষুধ রপ্তানিতেই বিশ্ববাজার থেকে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বা এলডিসি হিসেবে ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব ছাড় ১৭ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প খাতে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব ছাড় পাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানির আকার বাড়াতে চায়। বিশ্ববাজারে এখন ওষুধের বার্ষিক ব্যয় ৯৫ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। ইপিবি এবং বাংলাদেশ ওষুধশিল্প মালিক সমিতি (বাপি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সুনাম বিশ্বজুড়ে। বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্বের ৪৮ দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। দেশের ২৫৭টি কোম্পানির কারখানায় বছরে ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। ওসব কারখানায় বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ ও কাঁচামাল উৎপাদিত হচ্ছে। এ শিল্পে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
সূত্র জানায়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করেছে ১৩ কোটি ডলারের, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। করোনায় ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামের পালেও হাওয়া লেগেছে। মে ও জুনের শেয়ার লেনদেনে ওষুধ খাত ব্যাপকভাবে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত দুই বছরে ১ হাজার ২০০ ধরনের ওষুধ রপ্তানির অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১৪৭টি দেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিতে শীর্ষ সাত দেশ হচ্ছে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, কেনিয়া ও স্লোভেনিয়া। ওই দেশগুলোয় মোট ওষুধ রপ্তানির ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ যাচ্ছে। আর বাকি ৩৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হয়।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, জাতীয় অর্থনীতিতে ওষুধশিল্পের অবদান বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপিতে ওষুধ খাতের অবদান ছিল ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বর্তমানে ২৫৭টি অনুমোদিত কোম্পানির মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ১৫০টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইবিএল সিকিউটিরিজের ওষুধশিল্প খাত নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওষুধশিল্পের বাজার ২০ হাজার ৫১১ কোটি টাকার। গত পাঁচ বছরে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। পরবর্তী পাঁচ বছরে গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চার দশক ধরে ওষুধশিল্পে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ওষুধের বৈশ্বিক বাজারের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী ওষুধের বাজার ছিল ১ হাজার ২০৫ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধশিল্প মালিক সমিতির (বাপি) উপদেষ্টা, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির জানান, জনস্বাস্থ্যের জন্য ওষুধ অত্যন্ত জরুরি পণ্য। বাংলাদেশের ওষুধ খুবই ভালো করছে। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ওষুধশিল্পে আস্থা ও নির্ভরতা বাড়ছে।