• মে ৮, ২০২৪ ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

দিশারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের উদ্যোগে সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ

ফেব্রু ২১, ২০২৪

সিরাজুল ইসলাম, হরিপুর, ঠাকুরগাঁও:
মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা মানব অস্তিত্বের প্রধান তিনটি অবলম্বন। মানুষের পরিচয়ের সেরা কষ্টিপাথর মাতৃভাষা, দেশের ভাষা, জাতির ভাষা। মাতৃভাষার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকারসমূহের মধ্যে অন্যতম। এ অধিকার নিজের মতাে করে কথা বলার অধিকার, স্বতঃস্ফূর্ত চেতনায় উদ্ভাসিত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল বরকত, সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার এবং আরও অনেক নাম না জানা বাঙালি। তাদের সে রক্তে রঞ্জিত একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বজনীন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রয়েছে একটি গৌরবদীপ্ত ঐতিহাসিক পটভূমি । ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে পূর্ববাংলার জনগণ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল । বাঙালির সেই ঐতিহাসিক ভাষা শহীদ দিবস ২১-এ ফেব্রুয়ারি আজ সারাবিশ্বের ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ১৪ই আগস্ট, ১৯৪৭-এর পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির চেতনায় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়েছিল । তদানীন্তন পাকিস্তান রাষ্ট্রের গােড়াপত্তন ঘটে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা, কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলা ভাষাকে পাশ কাটিয়ে গােপনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও উর্দু ছিল মাত্র ৬ শতাংশ লােকের মাতৃভাষা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাকিস্তানি শাসকদের এ অপপ্রচেষ্টা বাঙালিকে বিদ্রোহী করে তােলে। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্বপক্ষে একটি প্রস্তাব পাশ করা হলে পূর্ব পাকিস্তানের জাগ্রত ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল প্রচণ্ড ক্ষোভের সাথে। তবে এ আন্দোলন জোরদার হয় ১৯৪৮ সালে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘােষণার পর থেকেই। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী যতই বাংলা ভাষার বিরােধিতা করতে থাকে ততই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। সমগ্র পূর্ববাংলা একই অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ হয়। বাঙালি ঘােষণা করেছিল, উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকে দিতে হবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ দাবি না মেনে ঘােষণা করে উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এ অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে সরকার ও ছাত্রসমাজের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়। এরই জের হিসেবে বায়ান্নর ২১-এ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। অনেক প্রাণের তাজা রক্তে সেদিন রঞ্জিত হয় রাজপথ। এ নৃশংসতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তােলে, গর্জে ওঠে সারা বাংলা। আতঙ্কিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে রক্তাক্ত একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। সময়ের দাবিতে ভাষা আন্দোলন পরিণত হয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। একুশের চেতনাই বাঙালিকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শক্তি জুগিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য। বাঙালির সেদিনের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। একুশ এখন আর কেবল বাঙালির ‘শহীদ দিবস’ নয়। একুশ এখন সারা বিশ্বের । বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ভাষা শহীদদের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা হয় এ দিনে বাঙালির ‘শহীদ দিবস’ এখন বিশ্ববাসীর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এককথায়, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাজাত প্রয়াসের ফসল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।এরই ধারাবাহিকতায় সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পুষ্পাস্তবক অর্পণ করে হরিপুর উপজেলাধীন সুনাম ধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিশারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।বুধবার সকাল ৮:০০ঘটিকায় কাঁঠাল ডাংগী বাজার সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাস্তবক অর্পণ শেষ একটি রেলি বের হয়। কাঠালডাংগী বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক অতিক্রম করে উক্ত রেলিতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক আজমল হোসেন, সহ:প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীন, সহ:শিক্ষক সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, আজগর হোসেন, আফসানা পারভীন, রুমি আক্তার, রুকসানা পারভীন, এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল কোমল মতি শিক্ষার্থী সহ সকল স্হানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। পরিশেষে রেলিটি শেষ হলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকল ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়।