হাফিজুর রহমান হৃদয়, নাগেশ্বরী:
চার ছেলে দুই মেয়ে ও স্বামী সবাই ভারতে। একা দেশে থেকে থেকে অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বের হন সন্তানদের খুঁজতে। এক সময় ঢুকে যান ভারতের অভ্যন্তরে। বিএসএফ ধরে থানায় দিলে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে থেকে মানবিক ক্ষমায় ছাড়া দিয়ে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে মাকে। কুড়িগ্রামের নাগেশ^রী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের গোবর্দ্ধনকুটি গ্রামের জহরভান বেওয়া ফিরলেও চার ছেলেকে পাননি ভারতে।
জহরভান জানায়, চার ছেলে দুই মেয়ে তার। স্বামী সন্তান সবাই থাকেন ভারতের দিল্লীতে। বাংলাদেশে একা থেকে হাপিয়ে উঠে ভারতে চলে যান স্বজনদের খুঁজতে। কিন্তু কীভাবে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছেন বুঝে উঠতে পারেনি সে। পরে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ তাকে আটক করে পাঠায় জেলহাজতে।
আড়াই বছর পর ছাড়া পেয়ে বুধবার চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। তবে কোথায় যাবেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন জহরভান। সেখানকার স্থানীয় রুবেল মিয়া নামের এক যুবক তার গতিবিধি টের পেয়ে তার সাথে কথা বলেবিস্তারিত জানতে পারেন। পরে রুবেল মিয়া জহরভানকে তার কাছে রেখে দেন এবং তার ছবি ও ভিডিও ফুটেজে বক্তব্য নিয়ে তার বন্ধু ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শিপন মোল্লাকে ফোন দিয়ে জানান বিষয়টি। পরে শিপন মোল্লাকে সে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পাঠালে তিনি নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী কলেজের প্রভাষক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে জানান এবং ছবি ও ফুটেজ পাঠালে তিনি চিনতে পারেন জহরভানকে। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে অবহিত করেন। পরে ইউপি সদস্য আক্কাছ আলী এবং জহরভানের ছেলে ও জামাতা মিলে চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে তাকে রুবেল মিয়ার হস্তক্ষেপে নিয়ে আসেন।
জহরভান বেওয়া আরও জানান, দেশে ফিরে এক ছেলে আর এক মেয়ে ও জামাতাকে ফিরে পেলেও এখনও খুঁজে পাননি অন্যদের। এজন্য কলিজাটা ধরপর করে তার। এখনও চাপা কান্নায় বুক ফাটে তার। তবে যে ছেলেকে পেয়েছেন সেও সহায়সম্বলহীন। বাড়ি ফিরলেও সেই বাড়ি নেই। কোথায় থাকবেন এমন দুঃশ্চিন্তায় সে হতাশ ।
তবে জহরভানকে স্থায়ী পুনর্বাসনে তার পাশে দাঁড়াবেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্থানীয়রা এমনটাই প্রত্যাশা স্বজনদের।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হবে।
সন্তানদের খুঁজতে ভারতে মা; জেল খেটে ফিরলেন আড়াই বছর পর
