• মার্চ ২১, ২০২৩ ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বিপুল লোকসানে বিজেএমসির পাটের বস্তা বিক্রির উদ্যোগ

সেপ্টে ১৩, ২০২০

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনে পাটের বস্তা বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি কম দামে পাটের বস্তা বিক্রির জন্য দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে। আর ওই চুক্তি মোতাবেক পাটের বস্তা বিক্রির কারণে বিজেএমসির ক্ষতি হবে অন্তত ৩৪ কোটি টাকা। তার মধ্যে দাম কমানোর কারণে ক্ষতি হবে ৮ কোটি টাকা আর প্রণোদনা বাবদ ক্ষতির পরিমাণ ২৬ কোটি টাকার বেশি। বিজেএমসির পক্ষপাতমূলক এমন সিদ্ধান্তে কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজেএমসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার গত জুলাই মাসে অব্যাহত লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল বন্ধ করে দেয়। ওসব পাটকলে এক লাখ ৩৫ বেল ‘স্ট্যান্ডার্ড বি টুইল ব্যাগ’ (৮০ কেজির পাটের বস্তা) জমে আছে। ওসব বস্তা বিক্রির জন্য বিজেএমসি এক সুদানি নাগরিক সঙ্গে দুবাইভিত্তিক তায়েফ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে চুক্তি করে। গত ৩০ জুলাই চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়। বস্তাগুলো সুদানে যাবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ১০০টি ‘স্ট্যান্ডার্ড বি টুইল’ বস্তার বাজারমূল্য ৯০ ডলার। ৩০০ বস্তায় এক বেল হয়। ওই হিসাবে মোট দাম হয় অন্তত ২২৭ কোটি টাকা। ওই মূল্যে বিজেএমসিরই তালিকাভুক্ত একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান গত ৩ আগস্ট বিদেশে পাটের বস্তা বিক্রি করার জন্য দর প্রস্তাব করেছে। কিন্তু তার আগেই বিজেএমসি ৩ ডলার কমে অর্থাৎ ৮৭ ডলার মূল্যে তায়েফ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সুদানি নাগরিকের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলে। ওই হিসাবে মোট দাম হয় প্রায় ২১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিক্রির ক্ষেত্রেই বিজেএমসির ৮ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হবে। অভিযোগ উঠেছে, চুক্তি ও শর্ত ভঙ্গের পরও প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর চাপে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিয়ে বিজেএমসি ওই সুদানি নাগরিকের কাছে পাট বিক্রি করতে চাচ্ছে। যা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিজেএমসির পাটের বস্তা ক্রেতা সুদানি নাগরিক আমিন আবদেল লতিফ ১৯৯১-২০১৬ সাল পর্যন্ত সুদানে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল ছিলেন। পাটের বস্তা ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ৫ আগস্টের মধ্যে ১০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তিনি তা করতে পারেনি। এখন যে টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করছে তাও বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশে আসেনি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতির লঙ্ঘন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের (এফই সার্কুলার নম্বর-১২) নিয়মানুযায়ী যদি সরাসরি রপ্তানি পণ্যের মূল্য সরকার নির্ধারিত চ্যানেলের মাধ্যমে না আসে এবং ক্রেতার নাম উল্লেখ না থাকে তাহলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি প্রণোদনা পাবে না। কিন্তুফেয়ারএফএক্স নামের লন্ডনের একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে সুদানি ওই ক্রেতার টাকা এসেছে। কিন্তু বিজেএমসি দুবাইয়ে অবস্থিত তায়েফ ইন্টারন্যাশনাল ডিএমসিসির সঙ্গে চুক্তি করেছে। ফলে সুদানি নাগরিকের কাছে পাটের বস্তাগুলো বিক্রি হলে বিজেএমসি ২৬ কোটি টাকার রপ্তানি প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হবে। সব মিলিয়ে বিজেএমসির মোট লোকসান হবে ৩৪ কোটি টাকা।
এদিকে বিগত ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বস্তা ক্রেতা সুদানি নাগরিকের পক্ষ থেকে বিজেএমসিকে টাকা পরিশোধ করা হয়নি। কারণ বৈদেশিক মুদ্রানীতি অনুযায়ী ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা না এলে এবং যে দেশে পাটের বস্তা রপ্তানি হচ্ছে সে দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ডলারে মূল্য পরিশোধে বাধা আছে। কিন্তু সুদানি ওই ক্রেতা বিদেশি মানি একচেঞ্জ থেকে বাংলাদেশের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ডলার পাঠিয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে বিজেএমসিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) শামীম আহমদে জানান, যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকে তাহলে ডলার পরিশোধ করা হবে না। আর যদি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে না থাকে তাহলে সমস্যা হবে না।
অন্যদিকে দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুযায়ী এখনো টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। তাই বিজেএমসি চাইলে এখনো দেশীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পাটের বস্তাগুলো রপ্তানি করা সম্ভব। তাতে বিজেএমসি নিজেই ৩৪ কোটি টাকা বেশি পাবে। গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার নামের একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি থেকে ১০০টি পাটের বস্তা ৯০ ডলার মূল্যে রপ্তানি করতে চায়। ওই প্রতিষ্ঠানটি বিজেএমসির পাটপণ্য রপ্তানির সর্ববৃহৎ প্রাতষ্ঠান। বিজেএমসি থেকে পণ্য রপ্তানি করতে গেলে আগে ৫ শতাংশ জামানত রাখলেই হতো। চলতি বছর তা হঠাৎ বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হয়। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে পরে ৫০ শতাংশ করা হয়। কিন্তু সুদানি ক্রেতার ক্ষেত্রে তা অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট গুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল জানান, বিজেএমসি দেশীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা বলেছে, ১০০টি পাটের বস্তার জন্য ৯০ ডলার মূল্যে ৫০ শতাংশ নগদ ও বাকি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে। অন্যদিকে বিদেশিদের কাছে ৮৭ ডলার মূল্যে মাত্র ১০ শতাংশ নগদে বিক্রির চুক্তি করে ফেলেছে। তারা যদি দেশীয় উদ্যোক্তাদের ১০ শতাংশ নগদের কথা বলতো তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তারা সহজেই এই সুযোগটা নিতে পারতো।
একই প্রসঙ্গে বিজেএমসির চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, চুক্তি করার কারণে মাল দিতে হচ্ছে। না হলে বিজেএমসির বিরুদ্ধে মামলা হলে বড় ভর্তুকি দেয়া লাগতে পারে। আর বিদেশিদের কাছে মাল বিক্রির চুক্তির পর দেশীয় উদ্যোক্তারা এসেছেন। তাতে বিজেএমসির কিছু করার ছিল না।