• এপ্রিল ২, ২০২৩ ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ-সার দেয়ার উদ্যোগ

সেপ্টে ২৩, ২০২০

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বছরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩৭টি জেলার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওসব জেলার ১৪টি ফসলের প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। আর ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ লাখের বেশি কৃষক বিনা মূল্যে বীজ ও সার পাবে। তাছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে আসন্ন রবি মৌসুমে কৃষকদের বিনামূল্যে বিভিন্ন ফসলের বীজ দেয়ারও একটি প্রকল্প রয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে কৃষকরা আরো বেশি উপকারভোগী হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি বছর বর্ষা ঋতুতে অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বছরও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় অনেক জেলার ফসলি জমি প্লাবিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে কৃষির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত জেলার কৃষকদের বিনামূল্যে শাক-সবজি চাষে বীজ দেয়ার পাশাপাশি রোপা ও নাবী আমন ধানের চারাও দেয়া হবে। তাছাড়া বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের চাষের জন্যও বিনামূল্যে বীজ দেয়া হবে। কৃষক যাতে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা কৃষকদের দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন শাক-সবজি চাষের জন্য কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ বিতরণ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। তার আওতায় শাক ও সবজি চাষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে ১০ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৫ টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ জন কৃষককে লালশাক, ডাঁটাশাক, গিমাকলমি, পুঁইশাক, পালংশাক, শশা, মিষ্টিকুমড়া, শিম, লাউ ইতাদি বীজ বিনামূল্যে বিতরণের কার্যক্রম চলছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় কৃষকের জমিতে কমিউনিটিভিত্তিক বীজতলার মাধ্যমে ২ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০ টাকার রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন ও বিনা মূল্যে বিতরণ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ওই কর্মসূচির আওতায় ৩৩টি জেলায় উৎপাদিত চারা ৩৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষকের কাছে বিতরণ করা হবে। আর উৎপাদিত ওই চারার মাধ্যমে ৪ হাজার ৬৯৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের জমি চাষ করা যাবে। ইতিমধ্যেই ৫২৭ দশমিক ৫ একর জমিতে বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে। ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ৬৯ লাখ ৬ হাজার ৯০০ টাকা ব্যয়ে দেশের ৪০ জেলায় ৫ হাজার ৬০টি ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাতে ১ হাজার ২৬৫ জন কৃষক সরাসরি উপকৃত হবে।
সূত্র আরো জানায়, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য ট্রেতে নাবী জাতের আমন ধানের চারা উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ৬০ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ে দেশের ২৫ জেলায় ৪১ হাজার ৬০০টি ট্রেতে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরি করে ১ হাজার ৬০০ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে। তাছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মাসকলাই বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে দেশের ৩৫ জেলায় ৫০ হাজার কৃষকের মাঝে মাসকলাই বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। একই সাথে চলতি অর্থবছরে মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু কৃষি উৎসব উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থান কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচিতে পারিবারিক পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৫২ কোটি ৯১ লাখ ৭ হাজার ৩৬০ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৫৯৭টি ইউনিয়নে এবং ১৪০টি পৌরসভায় মোট ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ জন কৃষকের মাঝে শাক-সবজি বীজ ও ফলের চারা বিতরণ করা হবে।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারের রবি মৌসুমে গম, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, মসুর, খেসারি, পেঁয়াজ, টমেটো, বিটিবেগুন ও মরিচ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ৯ লাখ ২৯ হাজার ১৯৪ জন কৃষকের কাছে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহের জন্য ৭৪ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৬ টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির একটি প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। এই প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে আরো বেশিসংখ্যক কৃষক সুবিধাভোগী হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক এমপি জানান, করোনা ও বন্যায় দেশের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে সহায়তা প্রদান করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ওসব কার্যক্রমের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হবে।