• মার্চ ২৯, ২০২৩ ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

পীরগঞ্জে মান্ধাতা আমলের ডাকঘরগুলোর বেহাল দশা !

এপ্রি ৪, ২০২২

কাঁধে চিঠির বোঝা নিয়ে ঝুনঝুন ঘণ্টা বাজিয়ে রাতের আঁধারে রানার চলত দূরের পথে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এখন এটা এখন অনেকটাই আষাড়ে গল্প। প্রিয়জনের খবরাখবর পেতে এখন আর ডাকপিয়নের অপেক্ষা করতে হয় না, ধর্ণা দিতে হয়না ডাকঘরে গিয়ে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়, তথ্য ও প্রযুক্তির কাছে বন্দি হয়ে পড়েছে ডাকঘরগুলো। এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম চিঠি, ডাকপিয়ন, ডাকবাক্স ও ডাকঘর এখন বিলুপ্ত প্রায়। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদরসহ মোট ১৪টি ডাকঘরের কার্যক্রম লোকবলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কাগজ কলমে উপজেলা সদর ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে অনন্তরামপুর (চৈত্রকোল), ভেন্ডাবাড়ী, গুর্জিপাড়া, বাগদুয়ার রসুলপুর, শানেরহাট, কাদিরাবাদ, টুকুরিয়া, জাফরপাড়া, খালাশপীর, রায়পুর, লালদিঘী, ফতেপুর ও বড় আলমপুর ডাকঘর রয়েছে। উপজেলা পোষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিটি শাখা ডাকঘরে তিনজন করে কর্মচারী থাকার কথা। এদের মধ্যে একজন ইডিএ (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্ট এজেন্ট), একজন ইডিএমসি (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্ট মেইল ক্যারিয়ার) ও একজন ইডিডিএ (এক্সট্রা ডিপার্টমেন্ট ডেলিভারি এজেন্ট)। লোকজনের কাছে ইডিএরা পোস্টমাস্টার এবং ইডিএমসি ও ইডিডিএরা পিয়ন হিসেবেই বেশি পরিচিত। মাসের শেষে ইডিএ (পোস্টমাস্টার) ৪হাজার ৪‘শ টাকা, ইডিএমসি ৪ হাজার, ইডিডিএ ৪ হাজার টাকা বেতন পান। ঈদ বা পূজায় তাদের ভাগ্যে কোনো বোনাস জোটে না। পান না সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধাও। অথচ বছরের পর বছর এক পদে অভিন্ন বেতনে অনিশ্চিত অবস্থায় তাদের কাজ করতে হয়। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ের ডাকঘরগুলো অধিকাংশই মান্ধাতা আমলের মাটির ঘর। কোন কোন স্থানে ভাড়া ঘর নিয়ে ডাকঘর খোলা হলেও কোন কার্যক্রম নেই। কোথাও কোথাও ডাকঘরের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোথাও আবার পোষ্ট মাষ্টার ও পিয়নের নিজ বাড়িতে নামমাত্র ডাকঘর করা হয়েছে। লোকবল আর সুষ্ঠু তদারকির অভাবে অধিকাংশ ডাকঘরের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। স্থানীয়রা জানায়, ডাকঘরগুলো প্রায় প্রতিদিনই বন্ধ থাকে। কাউকে আবার মাঝে মধ্যে সকালে বা সন্ধ্যার পর কয়েক মিনিটের জন্য খুলতে দেখা যায়। প্রাচীনতম মাটির ঘরের এসব ডাকঘর ভীষণ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘরের মাটির দেয়াল ফেটে খুলে খুলে পড়ছে। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে। উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশীর ভাগ ডাকঘরে লোকবল সংকট। ভেন্ডাবাড়ী ডাকঘরের পোষ্টমাষ্টার হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, কর্মস্থলের ঘরটিতে ঢুকতেও ভয় লাগে, কখন যে ভেঙ্গে পড়ে। বাগদুয়ার রসুলপুর পোষ্ট পিয়ন আবু ইউসুব আলী ও তার স্ত্রী মোহসীনা বেগম পোষ্টমাষ্টার। তারা বলেন, সরকারিঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায় দেড় যুগ ধরে নিজ বাড়ীতে পোষ্ট অফিসের কাজ চালিয়ে আসছি। রায়পুর পোষ্টমাষ্টার মোস্তাফিজার রহমান গোলাপ ও অনন্তরামপুর কলোনি বাজার তারা ফকির জানান, সরকারি কোন ঘর না থাকায় এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে কাজ-কর্ম চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা পোষ্ট অফিস পরিদর্শক মিলন কুমার রায় লোকবল সংকটের বিষয় স্বীকার করে বলেন, মোবাইলে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। যদি দিতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে বলতে হবে। এ বিষয়ে ডিপুটি পোষ্টমাষ্টার জেনারেল আজাদুল ইসলামের অফিস ফোনে (০৫২১৬২৪০১) একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা রিসিব করেননি।