• মার্চ ২৯, ২০২৩ ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাবৃদ্ধি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে পাঠদান!

জুলা ২৪, ২০২২

মোগলবাসা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কর্মকান্ড-১

বিশেষ প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মোগলবাসা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ একটি চক্রের কারণে ধ্বংসের পথে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। চরম দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট, ক্ষমতাবৃদ্ধি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে কোনরকমে চলছে বিদ্যালয়ে পাঠদান। তেমনি দুর্নীতির একটি চিত্র ফুটে উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির জামাতাকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে সাজানো নিয়োগ প্রক্রিয়া করার কারণে। এ কারণে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রধান শিক্ষক-ম্যানেজিং কমিটির চক্রটি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য গত ২১ জুন ২০২২ তারিখে একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একজন অফিস সহায়ক ও একজন আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। রহস্যজনক কারণে সে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সাধারণের নজরে আসে না। সে সুযোগে চক্রটি নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের জন্য তাদের অনুগত নিজস্ব কিছু লোক এবং নিজেদের আত্নীয় স্বজনকে দিয়ে পদ দুটির জন্য দরখাস্ত জমা করে। আয়া পদে ৭টি ও অফিস সহায়ক পদে ১০টি আবেদন জমা পড়ে। এরই মধ্যে চক্রটি ম্যানেজিং কমিটির অন্য সদস্যদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে নিজেদের পক্ষে মতামত গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করে। এর একটি উদ্দেশ্য সভাপতির আপন জামাতা মো: মিজানুর রহমান মিজুকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়া এবং তাদের পছন্দের অপর একজনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আয়া হিসেবে নিয়োগ দেয়া। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি তারা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে করতে থাকেন। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে বাধ সাধেন একজন সদস্য আশরাফুল আলম। তার স্বাক্ষর জাল করে জনবল নিয়োগ দেয়ার প্রস্ততি স্থগিতের জন্য তিনি বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত করেন। অন্যদিকে গোপনীয়ভাবে এই জনবল নিয়োগে যারা প্রার্থী হিসেবে দরখাস্ত করতে পারেন নি তারাও জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। এসবের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। তাদের মোবাইল নাম্বারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি। পরে অন্য শিক্ষকের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করলে প্রধান শিক্ষক কথা বলেন। এ সময় তথ্য গোপনের যাবতীয় চেষ্টা তিনি করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত: জেলা শিক্ষা অফিসার স্থগিত রেখেছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বারবার একই ব্যক্তি হতে পারবে কিনা এবং কমিটি গঠনের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান, সভাপতিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন তিনি কী কী কাগজের ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন তিনিই ভাল বলতে পারবেন। সভাপতিসহ কমিটির কাগজপত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা আছে।
অভিযোগকারী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের চরম দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট, ক্ষমতাবৃদ্ধির মূলহোতা হিসেবে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। তিনি উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস, উলিপুরে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘ ১০/১২ বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে পদটি দখলে রেখেছেন। কখনও অভিভাবক সদস্য, কখনও নির্বাচিত সদস্য, এডহক কমিটির সভাপতি কখনওবা দাতা সদস্য হিসেবে আজীবন সদস্য ইত্যাদি পদগুলো ব্যবহার করে হয়েছেন মূলত: বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রধান। কমিটির নানা দুর্নীতি নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে তাদের দাবি এই নিয়োগ প্রক্রিয়া অবিলম্বে বাতিল করা হোক।
এ বিষযে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমি নির্বাচিত হয়েছি। আর অফিস সহায়ক ও আয়া পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ হয়েছে। যারা সুবিধা নিতে পারে নি তারাই এর বিপক্ষে কথা বলছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জহুরুল হক জানান, ডিজির প্রতিনিধি নির্ধারণের পর আমি নিয়োগের বিষয়ে জানতে পারবো। আবুল কালাম আজাদ বারবার ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার আইনি বাধা আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একই ব্যক্তি দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হতে পারবে কিনা এ বিষয়ে আদালতের রায় থাকলেও আমাদের মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা না থাকায় তা বাস্তবায়ন করা হয় না। আর কমিটি নির্বাচনের পর সকল কাগজপত্র প্রধান শিক্ষকের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো: শামসুল আলম বলেন, নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিটির সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। (চলবে….)