পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সত্ত্বেও দিন দিন দেশে পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আইনে পলিথিন ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস্তবে সম্পূর্ণ উল্টো। এখন লোকজন ব্যাগ নিয়ে বাজারে যায় না। বরং দোকানিরা পলিথিনে করেই ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করে। এমনকি না চাইলেও দোকানিরা বিনা পয়সায় পলিথিনে বাজার ভরে দেয়। শুধুমাত্র এক দুটি নয়, যতগুলো আইটেমে পণ্য নেয়া হয়, ততোগুলো পলিথিন সঙ্গে দেয়া হয়। নিত্যপণ্যে বাজার ছাড়াও অন্যান্য কাজেও এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে পলিথিনের ব্যাগ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে প্রাত্যহিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পলিথিনের ব্যবহার। অথচ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে আইনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা দেখলে মনে হয় না পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দেশে কোন আইন রয়েছে। পরিবেশ এবং পরিবেশ অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বাজারে এখন নানা ধরনের রংয়ের এবং সব ধরনের সাইজের পলিথিনে সয়লাব। কিন্তু পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। যদিও পরিবেশ অধিদফতরের দাবি, মাঝে মাঝে পলিথিন বিরোধী অভিযান চালানো হয়। পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক অবৈধ পরিথিন কারখানাগুলোতেও অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই পলিথিনের উৎপাদন এবং ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, রাজধানীর সব মার্কেটেই পলিথিন পাইকারিভাবে বিক্রয় করা হয়। বিশেষ করে দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা ওসব পলিথিন পাইকারি দামে কিনে আনে। পরে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির সময় পলিথিনে বিনা পয়সায় পণ্য ভরে দেয়। সেজন্য কোন ধরনের পয়সা নেয়া হয় না। অথচ ক্রেতাকে বিনামূল্যে দেয়া পলিথিন বাবদ ছোট-বড় সকল দোকানিকেই মাসে কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে শতকরা প্রায় একশ’ ভাগ মানুষই এখন বাজারে যাচ্ছে ব্যাগ ছাড়া। পলিথিনে করেই বাজার সারছেন। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংস যে পণ্যই কেনা হোক না কেন, পলিথিনের ব্যবহার অবধারিত। অথচ পরিবেশের ক্ষতিক্ষর বিষয় বিবেচনায় এনে সরকার ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন বিপণন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারিতে সবার সামনে নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন চলছে। আর দিন দিন পলিথিনের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে তাতে অচিরেই পরিবেশের ওপর এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বিগত ২০১৫ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত পলিথিন নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৪ হাজার ৭৮৭টি মামলা দিয়েছে। ওসব মামলায় ৮ জনকে দ- এবং ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। অভিযানগুলোতে ৮৪২ টন পলিথিন জব্দ করা হয়। কিন্তু এতো অভিযানের পরেও পলিথিন ব্যবহার কমছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পবার সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন করা হচ্ছে কিনা পরিবেশ অধিদফতরের তা দেখভাল করার দায়িত্ব। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই পলিথিনের উৎপাদন বিপণন এবং ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
আইনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বেড়েই চলেছে পলিথিনের ব্যবহার
